ভ্রূণের রোপণ বা ইমপ্ল্যানটেশন (Implantation)
সংজ্ঞা : যে পদ্ধতিতে মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জাইগোট থেকে সৃষ্ট ব্লাস্টোসিস্ট, পরিণত স্ত্রীদেহের জরায়ুর অন্তঃপ্রাচীরগাত্রের এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরে সংযুক্ত হয়ে ধীরে ধীরে প্রোথিত হয়, তাকেই ভ্রূণের রোপণ বা ইমপ্ল্যানটেশন বলে।
সময়কাল : নিষেক সংঘটিত হওয়ার সপ্তম দিনে, ব্লাস্টোসিস্ট জরায়ুর প্রাচীরগাত্রের এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরে প্রোথিত হতে শুরু করে নিষেকের দশম থেকে দ্বাদশ দিনে এই রোপণ সম্পূর্ণ হয়। সুতরাং, ইমপ্ল্যানটেশন ও থেকে 5 দিন ধরে চলে।
→ ভ্রূণ রোপণের স্থান: সাধারণত পরিণত স্ত্রীদেহের জরায়ুর ফান্ডাস অংশে অথবা জরায়ুর অন্তঃপ্রাচীরগাত্রের এন্ডোমেট্রিয়াম-এ ভ্রূণ রোপিত হয়।
> এক্টোপিক ইমপ্ল্যানটেশন (Ectopic implantation) : অনেকসময় স্ত্রীদেহে জরায়ু ছাড়াও অন্যত্র, যেমন—ডিম্বাশয়, ফ্যালোপিয়ান নালী বা কখনো-কখনো উদরগহ্বরে ব্লাস্টোসিস্ট প্রোথিত হয়। এই প্রকার ভ্রূণ রোপণকে এক্টোপিক ইমপ্ল্যানটেশন বলে। এভাবে রোপিত হওয়া ভ্রুণ থেকে সন্তানের বিকাশ ঘটে না।
* ইমপ্ল্যানটেশনের পদ্ধতি (Process of implantation)
পর্যায়ক্রমিক বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ব্লাস্টোসিস্ট এন্ডোমেট্রিয়ামে রোপিত হয়। এই পদ্ধতি সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হল।
→ ইমপ্ল্যান্টেশনের পর্যায়সমূহ :
(i) ভ্রূণের পরিস্ফুরণে ব্লাস্টুলেশনের শেষের দিকে ব্লাস্টোসিস্ট জরায়ুর অন্তঃস্থ গহ্বরে ভাসমান অবস্থায় থাকাকালীন এর জোনা পেলুসিডা স্তরটি অবলুপ্ত হয়।
(ii) এই ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের প্রভাবে এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরের কোশগুলি সংখ্যায় বৃদ্ধি পায়। সেটি ক্রমশ পুরু, রক্তজালকসমৃদ্ধ ও গ্রন্থিময় হয়ে রোপিত হওয়ার উপযোগী হয়।
(iii) নিষেকের পরের সপ্তম দিনে ব্লাস্টোসিস্ট যখন রোপিত হওয়ার জন্য তৈরি, তখন সেটির বহিঃস্থ তল এন্ডোমেট্রিয়াম স্তর উভয়েই অধিক মাত্রায় সেল অ্যাডহেশন মলিকিউল * (CAM) গঠনের মাধ্যমে আঠালো হয়।
(iv) এরপর ব্লাস্টোসিস্টের এমব্রায়োব্লাস্টের এমব্রায়োনিক পোল এন্ডোমেট্রিয়ামের প্রাচীরগাত্রের সংস্পর্শে আসে। প্রকৃতপক্ষে এরপর রোপণ শুরু হয়।
(v) এন্ডোমেট্রিয়ামের সংস্পর্শে আসার পরে ব্লাস্টোসিস্টের ট্রোফোব্লাস্ট স্তরের কোশগুলি এমব্রায়োব্লাস্টের কাছাকাছি দুটি স্তরে বিভক্ত হয়। ভিতরের দিকের স্তরটিকে সাইটোট্রোফোব্লাস্ট ও বাইরের দিকের স্তরটিকে সিনসাইটিয়োট্রোফোব্লাস্ট বলে।
(vi) সিনসাইটিয়োট্রোফোব্লাস্টের কোশগুলি থেকে প্রোটিওলাইটিক উৎসেচক নিঃসৃত হয়। এর প্রভাবে এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরের কিছুকিছু কোশ পাচিত হয়। ওই অংশ দিয়ে সিনসাইটিওট্রোফোব্লাস্ট এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরে আঙুলের মতো প্রবর্ধক সৃষ্টি করে প্রবেশ করে। এভাবে জরায়ুগাত্রে ব্লাস্টোসিস্ট রোপিত হয়।
(vii) এরপর ব্লাস্টোসিস্টটি গ্যাস্টুলেশন-এর মাধ্যমে গ্যাস্টুলাতে পরিবর্তিত হয়। এই সময় গ্যাস্টুলাতে দ্বিস্তরীয় জার্ম ডিস্ক অ্যামনিওটিক গহ্বর ও তারপরে কুসুম থলি, কোরিওনিক গহ্বর গঠিত হয়।
(viii) প্রবিষ্ট ট্রোফোব্লাস্টের দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরের কোশগুলিতে অধিক মাত্রায় রক্তজালক সৃষ্টি হয় ও পুষ্টিদ্রব্য সঞ্চয়ের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ভ্রূণ রোপিত হওয়ার স্থানে, এন্ডোমেট্রিয়ামের কোশগুলি রূপান্তরিত হয়ে ডেসিডুয়া-তে পরিণত হয়।
(ix) নিষেকের পরবর্তী দশম থেকে দ্বাদশ দিনে রোপণ সম্পূর্ণ হয়।
(x) এরপর এন্ডোমেট্রিয়ামের যে অংশের পাচনের মাধ্যমে রোপণ ঘটেছে, সেই অংশ বাইরের দিক থেকে ফাইব্রিন প্লাগ দ্বারা বন্ধ হয়ে যায়। পরে এই প্লাগের জায়গায় আবরণী কলাস্তর গঠিত হয়।
(xi) যতক্ষণ না অমরা গঠিত হয়, ততক্ষণ ট্রোফোব্লাস্ট সংলগ্ন ডেসিডুয়াল কোশগুলি থেকে ভ্রূণের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিদ্রব্য ও শক্তি সরবরাহ হয় ।
জেনে রাখো :- এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরে প্রবিষ্ট ব্লাস্টোসিস্টের বাইরের দিকের ট্রোফোব্লাস্ট কোশগুলির প্লাজমা পর্দা ধীরে ধীরে বিনষ্ট হয়। তার ফলে বহু নিউক্লিয়াসযুক্ত সিনসিটিয়াম গঠিত হয়। এই কারণেই ট্রোফোব্লাস্টের বাইরের স্তরকে সিনসাইটিয়োট্রোফোব্লাস্ট বলা হয়।