১. ভ্যাকসিন উৎপাদনে ও জিন থেরাপিতে বায়োটেকনোলজির ভূমিকা কি ?
Ans :-
■ ভ্যাকসিন উৎপাদনে : ইনফ্লুয়েঞ্জা, পোলিয়ো, হেপাটাইটিস B, হার্পিস, AIDS ইত্যাদির ক্ষেত্রে রিকম্বিন্যান্ট DNA টেকনোলজি' দ্বারা টীকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ক্ষতিকর রোগসৃষ্টিকারী ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিজেন প্রস্তুতকারী জিন অ্যাটেনুয়েটেড (attenuated) ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। এই অ্যাটেনুয়েটেড জীব ভেক্টররূপে কাজ করে পোষক কোশে প্রবেশ করার পর প্রতিলিপি গঠন করতে পারে এবং রোগসৃষ্টিকারী জীবের অ্যান্টিজেন প্রস্তুত করতে পারে।
■ জিন থেরাপিতে : দেহের রোগসৃষ্টিকারী অস্বাভাবিক জিন স্বাভাবিক জিন দ্বারা প্রতিস্থাপন করার কৌশলকে জিন থেরাপি বলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় SCID বা সিভিয়ার কমবাইন্ড ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি (Severe Combined Immuno Deficiency) নামক একটি জিনঘটিত রোগ, যেখানে রোগীদের কোনো রোগ প্রতিরোধক্ষমতা থাকে না। যে-কোনো সাধারণ সংক্রমণে এরা মারা যায়। জিন চিকিৎসার পদ্ধতি হল রোগীর জিনোমের ত্রুটিপূর্ণ জিনের সঙ্গে স্বাভাবিক জিন যোগ করে ত্রুটিপূর্ণ জিনের কাজকে প্রশমিত করা হয়। 1990 খ্রিস্টাব্দে SCID রোগের জিন চিকিৎসা শুরু হয়।
২. cDNA কাকে বলে? জৈব প্রযুক্তিবিদ্যায় এর তাৎপর্য উল্লেখ কর ?
Ans :- cDNA, কোনো একতন্ত্রী RNA অণুর নিউক্লিওটাইড সজ্জাকে ছাঁচ (template) হিসেবে ব্যবহার করে পোষক কোশের বাইরে যে দ্বিতন্ত্রী DNA তৈরি করা হয়, তাকে cDNA (complementary DNA) বলে। এই কাজে রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ (reverse transcriptase) উৎসেচক সাহায্য করে। cDNA-এর সমগ্র নিউক্লিওটাইড সজ্জাই প্রোটিন তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।
গুরুত্ব: [1] ট্রান্সজেনিক জীব সৃষ্টিতে, গুরুত্বপূর্ণ জীবসৃষ্টিতে cDNA ব্যবহার করা হয়। [ii] ওষুধ, হরমোন প্রভৃতি প্রস্তুতিতে cDNA ব্যবহৃত হয় ।
৩. পেটেন্ট কি ? বায়োপাইরেসি বলতে কি বোঝ ?
Ans:-
পেটেন্ট :- কোন নতুন প্রয়োজনীয় আবিষ্কার (যা আগে কখনো ছিল না) যখন সরকারিভাবে স্বীকৃতি লাভ করে ও তার ওপর আবিষ্কর্তার অধিকার স্বত্ব জন্মায় তখন তাকে পেটেন্ট বলে ৷
বায়োপাইরেসি :- পেটেন্ট (আবিষ্কারের আইনি বৈধতা) গ্রহণের মাধ্যমে কোন দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিনা চুক্তি ও অনুমতিতে গবেষণা ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের ঘটনাকে বায়োপাইরেসি বলে । বায়ো পাইরেসি শব্দটি প্রচলন করেন Pat Moony।
বায়োপাইরেসির একটি দৃষ্টান্ত হলো আমেরিকার একটি কোম্পানি গম থেকে আটা তৈরীর এক পদ্ধতিকে পেটেন্ট করে নিয়েছে।
বায়োপাইরেসির একটি বিপজ্জনক দিক হলো, কোন দেশের মানুষের সংস্কৃতি লব্ধ জ্ঞান ও কোন জাতীয় সম্পদকে অন্যায় ভাবে চুরি করে কোন লোক বা সংস্থা তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ হিসাবে জগতের কাছে তুলে ধরে।
৪. জৈব প্রযুক্তি দ্বারা মানব ইনসুলিন প্রস্তুতি ব্যাখ্যা কর?
Ans :- কৃত্রিমভাবে মানব ইনসুলিন সংশ্লেষ (Artificially Synthesized Human Insulin) :
ট্রান্সজেনিক Escherichia coli দ্বারা মানব ইনসুলিন প্রস্তুতি-
i. মানুষের 11তম ক্রোমোজোমের উপর অবস্থিত 153 নিউক্লিওটাইড বিশিষ্ট ইনসুলিন জিন থাকে। এর মধ্যে 63টি নিউক্লিওটাইড A শৃঙ্খল ও 70টি নিউক্লিওটাইড B শৃঙ্খল গঠন করে।
ii. মানুষের অগ্ন্যাশয়ে beta কোশগুলিকে বিনষ্ট করার পর উচ্চ rpm এ সেন্ট্রিফিউজ করে কোশীয় উপাদান পৃথক করে নর্দান ব্লটিং পদ্ধতিতে ইনসুলিন mRNA সংগ্রহ করা হয়।
iii. ইনসুলিন mRNA থেকে রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজের প্রভাবে c-DNA তৈরি করে ইনসুলিন জিন প্রস্তুত করা হয়।
iv. ইনসুলিন সংশ্লেষকারী c-DNA দুটিকে (একটি A polypeptide শৃঙ্খল ও অপরটি B polypeptide শৃঙ্খলের) আলাদা আলাদা করে pBR322 cloning vector-এর lac-z জিনের পাশে যুক্ত করা হয় এবং রিকম্বিন্যান্ট DNA তৈরি করা হয়।
v. ওই দুইপ্রকার রিকম্বিন্যান্ট DNAকে transformation পদ্ধতিতে E. coli এর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে ট্রান্সজেনিক E. coli প্রস্তুত করা হয়।
vi. ট্রান্সজেনিক E. coli-কে কর্ষণ মাধ্যমে সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয় যেখানে এই ব্যাকটেরিয়ার কোশগুলি A polypeptide শৃঙ্খলসহ বিটা-গ্যালাকটোসাইডেজ এবং B polypeptide শৃঙ্খলসহ বিটা-গ্যালাকটোসাইডেজ তৈরি করতে থাকে। পরে শৃঙ্খলগুলি থেকে বিটা-গ্যালাকটোসাইডেজ আলাদা করে A ও B polypeptide শৃঙ্খল পাওয়া যায়। এরপর শৃঙ্খলগুলির মুক্ত N-প্রান্তদেশে মিথিওনিন জুড়ে দিলে আলফা ও বিটা শৃঙ্খল সমন্বয়ে কার্যকরী ইনসুলিন তৈরি হয়।
• আমেরিকার Eli-lilly কোম্পানি 1983 খ্রিস্টাব্দে 5 জুলাই হিউমিউলিন নামক প্রথম ট্রান্সজেনিক (transgenic) মানব ইনসুলিন বাজারে নিয়ে আসে।
৫. cDNA library কী ? রিকম্বিনেন্ট DNA যুক্ত ভেক্টরকে কোশে আবিষ্টকরণের দুটি পদ্ধতি উল্লেখ কর ?
Ans :-
cDNA library : mRNA থেকে রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজের সহয়তায় যে DNA তৈরি করা যায় তাকে বলে কমপ্লিমেন্টারি DNA বা cDNA । সুতরাং cDNA লাইব্রেরি হল কোনো জীবের, কোনো বিশেষ সময়ে যেসব mRNA তৈরি করে জিনের প্রকাশ ঘটায় তাদের থেকে উৎপাদিত DNA প্রতিলিপি। উৎপাদিত DNA, mRNA-এর বেস সজ্জার সঙ্গে পরিপূরক বলে একে cDNA বা কমপ্লিমেন্টারি DNA বলে। cDNA-এর মধ্যে কোনো ইনট্রন থাকে না। শুধুমাত্র এক্সন বা কোডিং সিকোয়েন্স দিয়ে DNA গঠিত হয়। জিনোম DNA লাইব্রেরিতে DNA খণ্ডগুলিতে যেমন এনহ্যান্সার ও পলিচালক বা নিয়ন্ত্রক উপাদানগুলি থাকে, cDNA লাইব্রেরিতে ওই অঞ্চলগুলি থাকে না।
পোষক কোশে ভেক্টরের প্রবেশ : ভেক্টরের সঙ্গে নির্দিষ্ট জিনের সংযুক্তির পরে নিম্নলিখিত কয়েকটি উপায়ে রিকম্বিন্যান্ট DNA-টি পোষক কোশে প্রবেশ করানো হয়।
(I) ট্রান্সফরমেশন (Transformation) : কোনো জীবের জিনোমের মধ্যে বহিরাগত নতুন DNA তথা জিনকে স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত করে জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটানোকে ট্রান্সফরমেশন বলে।
>> পদ্ধতি : পোষক কোশের কোশপর্দার বাইরের অংশ হাইড্রোফিলিক প্রকৃতির, কিন্তু এর অভ্যন্তরের লিপিড ল্যাজের দিকের অংশ হাইড্রোফোবিক প্রকৃতির। ফলে DNA-কে সহজে কোশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেয় না। কয়েকটি পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতির দ্বারা DNA-কে পোষক কোশে সহজে প্রবেশ করানো হয়। এগুলি হল—
• প্রথমে দ্বিযোজী আয়ন (যেমন — Ca²+ ) প্রয়োগ করা হয়। এটি কোশপ্রাচীরের গায়ে অবস্থিত ছিদ্র (pore) গুলিকে উন্মুক্ত করে। ফলে মিশ্র DNA-টির ওই ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করার প্রবণতা বেড়ে যায়।
• কোশটিকে বরফে রাখা হয়। তারপর কোশটিকে 42°C উষ্ণতায় নিয়ে গিয়ে আবার বরফে রাখা হয়। এর ফলে রিকম্বিন্যান্ট DNA-টি পোষক কোশে প্রবেশ করে।
(II) সংযুক্তি (Conjugation) : যে পদ্ধতিতে দুটি জীব অস্থায়ীভাবে পরস্পর সংযুক্ত হয়ে জেনেটিক পদার্থ আদানপ্রদান করে, তাকে সংযুক্তি বলা হয়। ব্যাকটেরিয়া এবং কিছু নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ ও প্রাণীতে এই পদ্ধতির মাধ্যমে পোষক কোশ (host cell)-এ রিকম্বিন্যান্ট DNA প্রবেশ করানো হয় ৷
>> পদ্ধতি : • সংযুক্তি পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারী প্লাসমিড হল F-প্লাসমিড। F-প্লাসমিডযুক্ত ব্যাকটেরিয়া কোশকে ডোনার (donor) কোশ বলে। অপরদিকে F-প্লাসমিডবিহীন ব্যাকটেরিয়া কোশ, যাকে রেসিপিয়েন্ট (recipient) কোশ বলে, সেটি ডোনার কোশের সংস্পর্শে এলে উভয়ের মধ্যে একটি সংযুক্তিনালী গঠিত হয়।
• এক্ষেত্রে ডোনার কোশের বহিঃনিউক্লীয় DNA (plasmid)-এর কোনো একটি স্থান থেকে দ্বিতন্ত্রী DNA-এর একটি তন্ত্রী খুলে অপর প্লাসমিড-বিহীন রেসিপিয়েন্ট কোশে যায়। উভয় কোশের মধ্যে প্লাসমিড DNA-র তন্ত্রীটির প্রতিলিপি গঠিত হয়।
• অবশেষে দুটি প্লাসমিডযুক্ত কোশ গঠিত হয়। এই পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে জৈবপ্রযুক্তিতে পোষক কোশে ভেক্টর প্রবেশ করানো হয়।
(III) মাইক্রো-ইনজেকশন (Microinjection) : ফাইন ক্যাপিলারি নিডলের সাহায্যে নির্দিষ্ট কোশের নিউক্লিয়াসে সরাসরি DNA প্রবেশ করানোর পদ্ধতিকে মাইক্রোইনজেকশন বলা হয়। In vitro ফার্টিলাইজেশনে এই পদ্ধতির ব্যবহার হয়।
>> পদ্ধতি : • কোনো নির্দিষ্ট কোশকে হোল্ডিং পিপেটের সাহায্যে ধরা হয়।
• এরপর ফাইন ক্যাপিলারি নিডলের সাহায্যে নির্দিষ্ট DNA খণ্ডযুক্ত দ্রবণকে কোশের নিউক্লিয়াসের ভিতরে পাঠানো হয়।
৬. bt crop উৎপাদনের প্রয়োজনীয় ধাপ গুলি বর্ণনা কর ?
Ans :- Bt জিনের থেকে Bt ক্রপ কথাটি এসেছে। যেসব শস্যের মধ্যে Bt নামে Bacillus thuringiensis ব্যাকটেরিয়া একটি জিন আশ্রয় পেয়েছে সেই শস্যকেই Bt ক্রপ বলে। Bacillus thuringiensis একটি মৃত্তিকাবাসী জীবাণু। এর জিনোমে Bt জিন থাকে ও জিনটির কারণে এই জীবাণু ক্রিস্টাল প্রোটিন (এক রকম টক্সিন) তৈরি করে যা পতঙ্গের কাছে বিষাক্ত।
জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা কিছু কিছু শস্যের গাছে Bt জিনটি ঢুকিয়ে জিনগতভাবে পরিবর্তিত বা জেনেটিক্যালি মডিফায়েড শস্য গাছ তৈরি করতে সমর্থ হয়েছেন। এদেরই Bt ক্রপ বলা হয়।
ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ তৈরির পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলি হল—
(১) নির্দিষ্ট জিনের শনাক্তকরণ।
(২) ভেক্টর নির্বাচন।
(৩) নির্দিষ্ট জিনটি পৃথক করে ভেক্টরের সঙ্গে সংযুক্তকরণ।
(৪) উদ্ভিদকোশে রিকম্বিন্যান্ট DNA-যুক্ত ভেক্টর প্রেরণ ও উদ্ভিদকোশটির মধ্যে জিন স্থানান্তরের পরে তার সংখ্যাবৃদ্ধি।
(৫) ক্যালাস কর্ষণ (callus Aculture)।
(৬) বিভিন্ন হরমোন ও গ্রোথ ফ্যাক্টরের প্রয়োগের মাধ্যমে ক্যালাসের বিভেদীকরণ (differentiation) এবং অঙ্গ পুনরুৎপাদন (regeneration)।
(৭) উদ্ভিদটির (plantlet) বৃদ্ধি।
Bt ক্রপগুলি নিজেদের দেহ কোশে ক্রিস্টাল প্রোটিন তৈরি করতে পারে। ফলে কোনো পেস্ট জাতীয় পতঙ্গ ওই উদ্ভিদকে আক্রমণ করলে সহজেই ওই পতঙ্গ মারা পড়ে।
এই কারণে Bt ক্রপ পেস্ট প্রতিরোধী। ভুট্টা, ধান, আলু, বেগুন, তামাক, টম্যাটো প্রভৃতি গাছে Bt জিন ঢুকিয়ে Bt ক্রপ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
৭. PBR 322 এর গঠন বর্ণনা করো ।
Ans :- pBR322 প্লাজমিড হল একটি বৃত্তাকার, ডবল-স্ট্র্যান্ডেড DNA অণু যা আণবিক জীববিজ্ঞানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি প্রায় 4,361 বেস জোড়া নিয়ে গঠিত এবং এটি ক্লোনিং ভেক্টর হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত প্রথম প্লাজমিডগুলির মধ্যে একটি।
• Origin of replication : pBR322-এ replication এর দুটি উৎপত্তি রয়েছে, একটি Escherichia coli (oriV) তে এবং অন্যটি Pseudomonas aeruginosa (oriP) তে বংশবিস্তার করার জন্য। এই বৈশিষ্ট্যটি প্লাজমিডকে উভয় ব্যাকটেরিয়া প্রজাতিতে replication করতে সক্ষম করে।
• Antibiotic resistance genes : এটি দুটি ভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধের জিন বহন করে — অ্যাম্পিসিলিন এবং টেট্রাসাইক্লিন। অ্যাম্পিসিলিন রেজিস্ট্যান্স জিন (AmpR) বিটা-ল্যাকটামেজ তৈরি করে, যা অ্যাম্পিসিলিনকে নিষ্ক্রিয় করে, অন্যদিকে টেট্রাসাইক্লিন রেজিস্ট্যান্স জিন (TetR) টেট্রাসাইক্লিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ প্রদান করে।
• Selectable markers : এই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জিনগুলি এমন ব্যাকটেরিয়াকে নির্বাচন করে যেটি সফলভাবে প্লাজমিডটি গ্রহণ করে তাদের বৃদ্ধি করে।
• Multiple cloning sites (MCS) : pBR322 প্লাজমিড সিকোয়েন্সের মধ্যে একাধিক অনন্য restriction উৎসেচক সনাক্তকরণ সাইট রয়েছে, যা ক্লোনিংয়ের জন্য ইপ্সিত DNA টুকরা সন্নিবেশের সুবিধা দেয়। এই সাইটগুলির মধ্যে রয়েছে EcoRI, BamHI, SaII, PstI, HindIII এবং অন্যান্য।
• Control elements : প্লাজমিডে promoters এবং টার্মিনেটরের মতো নিয়ন্ত্রক উপাদানও রয়েছে যা সন্নিবেশিত DNA সিকোয়েন্সের transcription নিয়ন্ত্রণ করে।
৮. জিন থেরাপি বলতে কী বোঝো ? PCR এর দুটি গুরুত্ব লেখ ?
Ans :-
Gene Therapy :- জিন প্রকৌশলের (Genetic Engineering) মাধ্যমে মানুষের ত্রুটিপূর্ণ কোন জিনকে স্বাভাবিক জিন দ্বারা প্রতিস্থাপন করাকে জিন থেরাপি (Gene Therapy) বলে। এ প্রক্রিয়ায় রোগের জন্য দায়ী জিনটা বাদ দেয়া হয় অথবা সেটাকে একটা ভাল জিন দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়।
জিন থেরাপির মাধ্যমে নির্দিষ্ট রোগের জন্য দায়ী ত্রুটিপূর্ণ জিন গুলিকে ভালো জিন দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়। যাতে করে ক্ষতিকর প্রোটিনের স্থলে শরীর সঠিক এনজাইম (Enzyme) বা প্রোটিন (Protein) উৎপাদনে সক্ষম হয়। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে এই চিকিৎসা পদ্ধতির পার্থক্য হলও জিন থেরাপির মাধ্যমে শুধু রোগের উপশমই করা হয় না জিনের বৈশিষ্ট্য-গত ত্রুটি দূর করে একে সমূলে নিবারণ করা হয়।
PCR এর দুটি গুরুত্ব :- PCR বা পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন হল একটি রাসায়নিক পদ্ধতি যা একটি নির্দিষ্ট DNA অঞ্চলকে বিপুল পরিমাণে প্রতিলিপি করতে ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিটি জিন থেরাপি, ফরেনসিক বিজ্ঞান, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
(i) জিন ঘটিত রোগ শনাক্তকরণের জন্য PCR ব্যবহার করা হয়।
(ii) ফরেনসিক মেডিসিনে অপরাধী শনাক্তকরণের জন্য DNA Fingerprinting এর ব্যবহার করা হয়।
(iii) গবেষণার কাজে প্রচুর পরিমাণে DNA তৈরি করার জন্য PCR খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
(iv) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং জিন থেরাপি করার জন্য PCR ব্যবহার করে DNA নমুনা তৈরি করা হয়।
৯. বায়োসেফটি বলতে কী বোঝো?
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এ উৎপাদিত বস্তুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করা যায় না, ফলে জিন টেকনোলজিতে যথেষ্ট পরিমাণ ঝুঁকি থেকেই যায়। ট্রান্সজেনিক জীব থেকে উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীবদের কোনো ঝুঁকি প্রতিরোধ করার জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাকে বায়োসেফটি বলে।
১০. বায়োপাইরেসি কী ?
কিছু সংগঠন বা সংস্থা এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলি অন্য জাতিগুলির অর্থাৎ দেশগুলির জৈব সম্পদ বা পেটেন্ট জৈব সম্পদ যথাযথ অনুমতি ব্যতিরেকেই লুণ্ঠন করছে তাকে বায়োপাইরেসি বলে।
১১.বায়োপেটেন্ট কাকে বলে ?
পেটেন্ট হল সরকার প্রদত্ত উদ্ভাবনকে দেওয়া অধিকার যা অন্যান্যরা উদ্ভাবনের বাণিজ্যিক ব্যবহার করতে না পারে। যখন পেটেন্টকে জৈবিক ব্যাপারে বা তা থেকে উৎপাদিত বস্তুর জন্য অনুমতি প্রদান করা হয় তাকে বায়োপেটেন্ট বলে।
১২. জিন প্রযুক্তিবিদ্যার ধাপ (Steps in Genetic Engineering) বর্ণনা করো?
Ans :-
জিন প্রযুক্তিবিদ্যার ধাপগুলি নীচে বর্ণনা করা হলঃ
(i) নির্বাচিত জিন বা DNA সংগ্রহ (Collection of selected gene or DNA)।
(ii) জিন বা DNA-কে প্রস্তুত করা (Preparation of gene or DNA)।
(iii) উপযুক্ত ভেক্টরের মধ্যে নির্বাচিত জিন বা DNA-কে প্রবেশ করিয়ে নতুন সংযুক্তি বা রিকম্বিন্যান্ট DNA গঠন (Introduction of selected gene or DNA into a suitable vector to form recombinant DNA)
(iv) রিকম্বিন্যান্ট DNA যুক্ত ভেক্টরকে ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য পোষক কোশে প্রবেশ করানো এবং প্রতিপালন (Introduction of vector with recombinant DNA into a bacterium or other host cells and maintenance)
( v) ট্রান্সজেনিক বা পরিবর্তিত কোশকে নির্বাচন (Selection of transgenic or transformed cells)।
(vi) জিন প্রযুক্তিবিদ্যা লব্ধ ট্রান্সজেনিক জীবের ব্যবহার (Use of genetically engineered transgenic organisms
১৩. বায়োপেটেন্ট এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলি লেখ ?
Ans :-
সুবিধা :- (i) প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় নিয়ন্ত্রণ করা যায় । (ii) মানব কল্যাণে জীববৈচিত্র্যের প্রয়োগ করা যায়। (iii) পেটেন্টের আওতাভুক্ত জিনিস অর্থনৈতিক সুবিধা এনে দেয়। (iv) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ন্যায্য মূল্যায়ন প্রাপ্তির ব্যবস্থা করে দেয়।
অসুবিধা :- (i) উন্নত দেশ গুলি বায়োপেটেন্টের মাধ্যমে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলি থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ নির্বিচারে নিজের বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। (ii) একাধিক প্রজাতির জীব এভাবে বায়োপেটেন্টের আয়তায় চলে এলে ওই জীব গুলি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ অনেক কমে যায়। (iii) কোন দেশের কোন প্রাকৃতিক সম্পদ বায়োপেটেন্ট এর মাধ্যমে কোন কোম্পানির হস্তগত হলে সাধারণ মানুষ সেই সম্পদ ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হয়।
১৪. PCR দ্বারা জিন ক্লোনিং পদ্ধতিটি সংক্ষেপে লেখ।
Ans :- In vitro পদ্ধতিতে DNA পলিমারেজ উৎসেচকের সাহায্যে কাঙ্খিত DNA খণ্ডকের প্রতিলিপিকরণই হল PCR। এই পদ্ধতির আবিষ্কর্তা হলেন বিজ্ঞানী Kary Mullis।
PCR পদ্ধতির পর্যায়গুলি হল নিম্নরূপ—
(i) প্রতিলিপিকরণ করা হবে এমন কাঙ্ক্ষিত DNA, কাঙ্ক্ষিত DNA-এর শৃঙ্খল দুটির 3' এর পরিপূরক অলিগোনিউক্লিওটাইড প্রাইমার। Thermus aquaticus থেকে প্রাপ্ত Tag পলিমারেজ এবং চার প্রকার ডি-অক্সি রাইবোনিউক্লিওটাইড (dATP, ACTP, dGTP, dTTP)-এর মিশ্রণ প্রস্তুত করা হয়।
(ii) PCR যন্ত্রে মিশ্রণকে 95°C তাপমাত্রায় রাখলে প্রতিলিপিযোগ্য DNA-এর দ্বিতন্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে একতন্ত্রীতে পরিণত হয় যা ডিন্যাচুরেশন নামে পরিচিত।
(iii) এরপর মিশ্রণের তাপমাত্রা 60°C-এ নামিয়ে আনলে একতন্ত্রী হওয়া কাঙ্ক্ষিত DNA-এর উভয়তন্ত্রীয় 3' প্রান্তে দুটি প্রাইমার যুক্ত হবে যা অ্যানেলিং নামে পরিচিত।
(iv) এরপর তাপমাত্রা আবার বৃদ্ধি করলে (70 - 72°C) Taq পলিমারেজ উৎসেচকটি প্রাইমারের 3' প্রান্তের দিকে কাঙ্ক্ষিত DNA-এর তন্ত্রীয় পরিপূরক নিউক্লিওটাইড যুক্ত করে DNA-এর শৃঙ্খল সম্প্রসারণ করে। এভাবে DNA-এর প্রতিলিপিকরণ করা হয়।
20 - 30টি PCR চক্রসম্পন্ন করে 1টি DNA এর মিলিয়ন প্রতিলিপি তৈরি করা হয়।
১৫. চিকিৎসা ক্ষেত্রে বায়োটেকনোলজির দুটি প্রয়োগ লেখো ।
Ans :-
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে জৈবপ্রযুক্তির প্রয়োগ (Application of biotechnology in health) :-
রিকম্বিন্যান্ট DNA টেকনোলজির সাহায্যে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে। যেমন— এই প্রযুক্তির সাহায্যে বিভিন্ন ওষুধ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। জৈবপ্রযুক্তির প্রয়োগের দ্বারা সৃষ্ট এইসব ওষুধগুলোকে রিকম্বিন্যান্ট ড্রাগস বলে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে জৈবপ্রযুক্তির অবদান উল্লেখ করা হল।
(i) ভ্যাকসিন : গুটি বসন্ত, হেপাটাইটিস প্রভৃতি প্রতিরোধে এটি ব্যবহৃত হয়।
(ii) ইনটারফেরন : জৈবপ্রযুক্তির সাহায্যে ঈস্ট কোশে মানুষের ইনটারফেরন প্রবেশ করানো যায়। একে ঈস্ট ইনটারফেরন বলে। এটি অনেক ভাইরাস (হেপাটাইটিস C)-এর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
(iii) অ্যান্টিবায়োটিক : ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক প্রভৃতি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক নিষ্কাশন করা হয়। এগুলি অনেক রোগ প্রতিরোধে সক্ষম।
(iv) হিউম্যান ইনসুলিন : ট্রান্সজেনেসিসের মাধ্যমে ঈস্ট কোশ থেকে হিউম্যান ইনসুলিন উৎপাদন করা যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
১৬. ট্রান্সজেনিক কোশ কাকে বলে ?
Ans :- টোটিপোটেন্ট স্টেম কোশ (যে কোশ সমস্ত ধরনের কোশ তৈরি করতে পারে) বহিরাগত জিন প্রবেশ করালে যে পরিবর্তিত বৈশিষ্ট্য সমন্বিত নতুন কোশ সৃষ্টি হয় তাকে ট্রান্সজেনিক কোশ বলা হয়।
১৭. জৈব সুরক্ষায় যে-কোনো তিনটি বিচার্য বিষয় উল্লেখ কর।/ বায়োসেফটি ইস্যু-এর তিনটি বিষয় উল্লেখ কর।
Ans :- জৈব সুরক্ষায় যে-কোনো তিনটি বিচার্য বিষয় :-
(A) মানব স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব :-
(i) GMO উৎপাদিত দ্রব্যের বিষক্রিয়া, খাদ্যগুণ ও নিরাপত্তা সৃষ্টি করতে পারে কিনা।
(ii) অ্যালার্জি সৃষ্টি করবে কিনা।
(iii) অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী যেন না হয় ।
(B) কৃষির উপর প্রভাব:-
(i) ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদের প্রভাবে আগাছা সুপার উইডসে পরিণত হতে পারে।
(ii) পেস্টিসাইড প্রতিরোধী পেস্ট সৃষ্টি।
(iii) ব্যায় বহুল।
(C) পরিবেশজনিত বিপদ:-
(i) ট্রান্সজিনের বহির্গমন দ্বারা বন্ধ্যা জীব সৃষ্টি।
(ii) ট্রান্সজিন সমৃদ্ধ জীব দ্বারা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক জীবের সংখ্যা হ্রাস ফলে জীববৈচিত্র্য হ্রাস।
(iii) জিনের অনাকাঙ্ক্ষিত বহিঃপ্রকাশ।
১৮. গোল্ডেন রাইস বলতে কি বোঝো ?
Ans :- গোল্ডেন রাইস : এটি একপ্রকার GM crop । এর মধ্যে ট্রান্সজেনেসিস পদ্ধতির দ্বারা তিনটি বিটা-ক্যারোটিন (beta-carotene ) সংশ্লেষকারী জিন (psy, ctrl 3 lcy জিন) স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হল চালের ভক্ষাংশে অতিরিক্ত ভিটামিন সৃষ্টি করা। A বিটা-ক্যারোটিন (Vit-A-এর অগ্রদূত) সংশ্লেষের জন্য এইপ্রকার চালের রং হলদে হয়।
১৯. ইনসুলিন উৎপাদনে বায়োটেকনোলজির ভূমিকা লেখ ? SCID এর পুরো নাম লেখ ?
Ans :- ইনসুলিন উৎপাদনে বায়োটেকনোলজির ভূমিকা :- ইনসুলিন হল একটি প্রোটিন হরমোন যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসুলিন অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ দ্বারা উৎপন্ন হয়। তবে, ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না বা পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন উৎপন্ন করতে পারে না। এই কারণে, ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন ইনজেকশনের মাধ্যমে নিয়মিত গ্রহণ করতে হয়।
ইনসুলিন উৎপাদনের জন্য বায়োটেকনোলজির যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় সেগুলি হল:
• জিন প্রযুক্তি : এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ইনসুলিনের জিনটিকে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা উদ্ভিদ কোশে স্থানান্তর করা হয়। এই কোশগুলি তখন ইনসুলিন উৎপাদন করতে শুরু করে। যেমন – মানব ইনসুলিন জিন কুসুম ফুল (Safflower) উদ্ভিদে প্রবেশ করিয়ে বর্তমানে স্বল্প খরচে ইনসুলিন উৎপাদন সম্ভব হয়েছে (SemBioSys কোম্পানি) । এইভাবে জেনেটিক্যালি মডিফাইড উদ্ভিদে কাঙ্ক্ষিত উপাদানের উৎপাদনকে বলে বায়োফার্মিং (Biofarming) ।
• প্লাজমিড প্রযুক্তি : এই প্রযুক্তির ব্যবহার করে ইনসুলিনের জিন একটি প্লাজমিড নামক একটি ছোট DNA অণুতে সংযুক্ত করা হয়। এই প্লাজমিডটি ব্যাকটেরিয়া কোশে প্রবেশ করানো হয়, যার ফলে ব্যাকটেরিয়া ইনসুলিন উৎপাদন করতে শুরু করে।
• সেল কালচার : এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোশগুলিকে ল্যাবরেটরিতে বৃদ্ধি করা হয়। এই কোশগুলি থেকে ইনসুলিন সংগ্রহ করা হয়।
SCID : Severe Combined Immuno Deficiency
২০. Ti প্লাজমিড কি? একটি ট্রান্সজেনিক গরুর নাম লেখ ?
Ans :-
Ti প্লাজমিড : Agrobacterium tumefaciens নামক ব্যাকটেরিয়ায় উপস্থিত ক্রাউন গল নামক টিউমার সৃষ্টিকারী প্লাসমিড হল Ti প্লাজমিড। এর মধ্যে দুটি জিন থাকে যথা – Vir ও T-DNA । এর মধ্যে Vir জিনের জন্য ব্যাকটেরিয়া গাছকে আক্রমণ করতে পারে ও T-DNA এর প্রভাবে গাছে টিউমার সৃষ্টি হয়।
Ti প্লাজমিড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেক্টর। এটি ব্যবহার করে, বিজ্ঞানীরা উদ্ভিদের জিনকে পরিবর্তন করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, Ti প্লাজমিড ব্যবহার করে, উদ্ভিদে পুষ্টিকর উপাদানের পরিমাণ বাড়ানো বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যেতে পারে।
প্রথম ট্রান্সজেনিক গরুর নাম ছিল অ্যান্টিস। এই গরুটি ১৯৯৪ সালে আমেরিকার ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি করা হয়েছিল। অ্যান্টিসের মধ্যে একটি জিন প্রবর্তন করা হয়েছিল যা তাকে মানুষের ইনসুলিন উৎপাদন করতে সক্ষম করেছিল। এই গরুটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইনসুলিনের একটি সম্ভাব্য উৎস হিসাবে গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।
২১. GMO কি? একটি GMO উদ্ভিদ ও প্রাণী এর নাম লেখ?
Ans :- চিরাচরিত ব্রিডিং পদ্ধতির পরিবর্তে উদ্ভিদ, প্রাণী, ছত্রাক এবং অণুজীবের মধ্যে জিন প্রবেশ করিয়ে যে পরিবর্তিত জীব সৃষ্টি করা হয় তাদের Genetically Modified Organism বা GMO বলে।
GMO উদ্ভিদ হলো Bt বেগুন, গোল্ডেন রাইস।
GMO প্রাণী হলো ট্রান্সজেনিক ভেড়া, ট্রান্সজেনিক মাছ।
২২. জৈব প্রযুক্তি বিদ্যায় ব্যবহৃত ক্লোনিং ভেক্টরের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো ? আণবিক কাঁচি কাকে বলা হয় ?
Ans :- ক্লোনিং ভেক্টর : যে DNA ভিক্টর নির্দিষ্ট DNA সিকোয়েন্সের অসংখ্য প্রতিলিপি (ক্লোন) গঠনে সক্ষম তাকে ক্লোনিং ভেক্টর বলে । এই প্রকার ভেক্টর জিনোমিক লাইব্রেরী তৈরিতে, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ DNA প্রোব প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয়।
ক্লোনিং ভেক্টরের বৈশিষ্ট্য :- (i) ভিক্টর কম আণবিক গুরুত্বসম্পন্ন হবে ফলে পোষাক কোশ থেকে ভেক্টর গুলিকে সহজে পৃথক করা যাবে । (ii) ভেক্টর টি কাঙ্খিত জিন সহ স্বপ্রতিলিপিকরণ (self replication) এ সক্ষম হবে অর্থাৎ এটি পোষক দেহে নিজের অনেকগুলি প্রতিলিপি গঠন করতে পারবে এর ফলে নির্বাচিত বৈশিষ্ট্য যুক্ত বহিরাগত DNA এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
• জৈব প্রযুক্তিবিদ্যায় আণবিক কাঁচি হলো রেস্ট্রিকশন এন্ড্রো নিউক্লিয়েজ ।
২৩. Hybridoma কোশ কী ?
Ans :- নির্দিষ্ট আন্টিবডি প্রস্তুতকারী লিম্ফোসাইট কোশের সঙ্গে মায়েলোমা, অর্থাৎ ক্যান্সারগ্রস্ত প্লাজমা কোশের মিলন ঘটিয়ে সংকর কোশ সৃষ্টির পদ্ধতিকে হাইব্রিডোমা টেকনোলজি বলা হয় ৷ এই পদ্ধতিতে সৃষ্ট সংকর কোশটিকে হাইব্রিডোমা বলে ৷
২৪. জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বলতে কি বোঝ ? ট্রান্সফেকশন ও ইলেকট্রোপোরেশন কি ?
Ans :-
• জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং :-
• ট্রান্সফেকশন (Transfection) : প্রাণীকোশে, বিশেষত স্তন্যপায়ী কোশে যে | সক্রিয় পদ্ধতিতে DNA খণ্ডক প্রবেশ করিয়ে সেই DNA-র অঙ্গীভূত করা হয়, | তাকে ট্রান্সফেকশন বলে। ইলেকট্রোপোরেশন, জিনগান প্রভৃতি ভৌতপদ্ধতি এবং লাইপোফেকশন, ক্যালশিয়াম ফসফেট প্রভৃতি রাসায়নিক পদ্ধতি দ্বারা ট্রান্সফেকশন করা হয়।
• ইলেকট্রোপোরেশন (Electroporation) : যে কৃত্রিম পদ্ধতির মাধ্যমে ইলেকট্রোডের সাহায্যে কিছুক্ষণের জন্য ইলেকট্রিক শক্ প্রয়োগ করে কোনো সজীব কোশের কোশপর্দায় ভেদ্যতা সৃষ্টি করে বাইরে থেকে DNA প্রবেশ করানো হয়, তাকে ইলেকট্রোপোরেশন বলা হয় ।
২৫. জিন প্রযুক্তিবিদ্যায় ব্যবহৃত কতগুলি ভেক্টরের উদাহরণ দাও ?
Ans :- জিন প্রযুক্তি বিদ্যায় ব্যবহৃত ভেক্টর গুলি হল :
(i) Pasmid Vector : ব্যাকটেরিয়া কোষে নিজস্ব জিনোম ছাড়াও অতিরিক্ত ক্ষুদ্র বলাকার DNA থাকে একে বলা হয় প্লাসমিড। বিশেষভাবে প্রস্তুত কয় প্রকার প্লাসমিড হল -- pUC গোত্র ভুক্ত প্লাসমিড, শাটল ভেক্টর (Yeast Episomal Plasmid), pBR 322 প্লাসমিড।
(ii) ভাইরাস : লাইসোজেনিক ফাজ ভাইরাস হল ব্যাকটেরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাস । ফাজ ভাইরাসকে ভেক্টর রুপে ব্যবহার করলে তাকে ফাজ ভেক্টর বলে। যেমন -- ল্যাম্বডা ফাজ ব্যাকটেরিয়ায় জন্য, রেট্রোভাইরাস, অ্যাডিনো ভাইরাস ও হারপিস ভাইরাস প্রানীদের জন্য, উদ্ভিদের ক্ষেত্রে CMV (Cauliflower Mosaic Virus) ভেক্টর হিসাবে ব্যাবহার করা হয়।
(iii) Cosmid : ল্যামডা ব্যাকটেরিওফাজের DNA ও প্লাসমিড DNA একত্রিত করে কসমিড তৈরী করা হয় ৷
(iv) কৃত্রিম ক্রোমোজোম বাহক : কতগুলি কৃত্রিম ক্রোমোজোম ভেক্টর রূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন - Yeast Artificial Chromosome (YAC , ইস্ট কোশে ক্লোনিং এর জন্য ব্যবহৃত হয়) , Bacterial Artificial Chromosome (E.Coli ব্যাকটেরিয়ার F প্লাসমিডের আদলে তৈরী করা হয়েছে BAC)
২৬. প্যালিনড্রোমিক সিকোয়েন্স কী?
Ans :- প্যালিনড্রোমিক সিকোয়েন্স : DNA-র একটি পলিনিউক্লিওটাইড শৃঙ্খলের ওপর অবস্থিত কোনো নির্দিষ্ট নিউক্লিওটাইড সজ্জার প্রথম অর্ধেক এবং দ্বিতীয় অর্ধেক যদি পরস্পরের প্রতিবিম্ব (mirror image) হয়, অর্থাৎ যদি 53 বা 3′→ 5′ অভিমুখে একইরকম দেখায়, তবে তাকে প্যালিনড্রোমিক সিকোয়েন্স বলে। এর ফলে দ্বিতন্ত্রী DNA-র পরিপুরক শৃঙ্খলেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়।
5'GAA | AAG 3' (এক তন্ত্রী DNA)
দ্বীতন্ত্রী DNA :
5'GAA | AAG 3'
3'CTT | TTC 5'
২৭. মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি কি ? এর প্রয়োগ লেখ ?
Ans :- মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিগুলি হল এমন এক ধরনের অ্যান্টিবডি, যাদের প্রত্যেকেই একটি বিশেষ অ্যান্টিজেনের প্রতি সংবেদনশীল। জৈবপ্রযুক্তির সাহায্যে এই অ্যান্টিবডি উৎপাদনকারী কোশ কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত করা সম্ভব। একটি বিশেষ অ্যান্টিজেনের প্রতি সংবেদনশীল প্লিহা কোশ ও মায়েলোমা কোশের মধ্যে ফিউশনের মাধ্যমে ওইজাতীয় কোশ (হাইব্রিডোমা) প্রস্তুত করা হয় ৷
>> প্রয়োগ: মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির ব্যাবহারিক প্রয়োগগুলি নিম্নরূপ—
[1] ক্লোনিং: জিন ক্লোন করার সময়ে ক্লোন করা জিনবাহী কোশ শনাক্ত করতে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি সাহায্য করে।
[2] কোশ শনাক্তকরণ: বিশেষ ধরনের কোশ চিনতে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি সাহায্য করে। এক্ষেত্রে সাধারণত কোশপর্দায় অবস্থিত প্রোটিনগুলি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির অ্যান্টিজেনরূপে কাজ করে।
[3] অনাক্রম্যতা প্রতিরোধ : অনেকক্ষেত্রে মানুষের অনাক্রম্যতন্ত্র তার নিজের দেহের কোশকে আক্রমণের ফলে যে রোগ সৃষ্টি হয়, তাকে অটোইমিউন ডিজিজ বলে। আবার দেহে প্রতিস্থাপিত কোনো অঙ্গ, অনাক্রম্যতন্ত্র দ্বারা আক্রান্ত হয়। এক্ষেত্রে MAB প্রয়োগ করলে, তা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নিজের দেহের কোশের ওপরেই আক্রমণে বাধা দেয়।
[4] রোগ নির্ণয়: দেহতরল পরীক্ষার দ্বারা রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ব্যবহৃত হয়। যেমন— যৌনরোগ নির্ণয়ে, কিছু ক্যানসার নির্ণয়ে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির সাহায্য নেওয়া হয় ৷