প্যালিয়োবোটানির অর্থ (Meaning of Palaeobotany)
প্যালিয়োবোটানি (Palaeobotany) হল জীবাশ্ম উদ্ভিদের (fossil plants) অধ্যয়ন। এই জীবাশ্মগুলো পৃথিবীর স্তর (layers of earth) এবং কিছু নির্দিষ্ট শিলা স্তরে (rock layers) পাওয়া যায়। এটি কখনও কখনও প্যালিওবোটানি (Paleobotany) নামেও লেখা হয়।
শব্দটি গ্রিক শব্দ 'palaeon' অর্থাৎ 'পুরনো' এবং 'botany' অর্থাৎ 'উদ্ভিদবিদ্যা' থেকে এসেছে।
এটি প্যালিওলজি (Palaeology)-র একটি শাখা। এটি ভূতাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটে উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ (plant remains) শনাক্ত করা এবং সেই তথ্য ব্যবহার করে পুরাতন উদ্ভিদ পরিবেশ (paleogeography) পুনর্গঠন করা ও উদ্ভিদের বিবর্তন ইতিহাস (evolutionary history of plants) নির্ধারণ করার কাজে সহায়তা করে।
প্যালিয়োবোটানির জনক
স্টেনবারি (Stenbery) (১৭৬১-১৮৩৮) কে প্যালিয়োবোটানির জনক (father of Palaeobotany) বলা হয়।
ভারতে প্যালিয়োবোটানির জনক
বীরবল সাহনী (Birbal Sahni) কে ভারতে প্যালিয়োবোটানির জনক বলা হয়। তিনি Williamsonia sewardi নামক জীবাশ্ম উদ্ভিদ আবিষ্কার করেন।
প্রবন্ধ #১: জীবাশ্মের অর্থ (Meaning of Fossils)
'Fossil' শব্দটি ল্যাটিন শব্দ 'fodere' থেকে এসেছে, যার অর্থ "খনন করা" (to dig up)। সুতরাং, জীবাশ্ম বলতে পৃথিবী থেকে উত্তোলিত (excavated) এমন কিছু বোঝায় যা মানুষ দ্বারা তৈরি নয়।
জীবাশ্ম হল পৃথিবীর গর্ভে (womb of the earth) সংরক্ষিত অতীত জীবনের চিহ্ন (traces of past life forms)।
আসলে, জীবাশ্ম হল পৃথিবী থেকে পাওয়া জীবিত বস্তুর অবশিষ্টাংশ (organic remains)। এগুলো প্রাচীন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।
জীবাশ্মের প্রকারভেদ (Types of Fossils)
জীবাশ্মকে নিম্নলিখিত বিভাগগুলিতে ভাগ করা যায়:
১. রাসায়নিক জীবাশ্ম (Chemical Fossils)
এগুলি হল জৈব যৌগের (organic compounds) অবশিষ্টাংশ, যা তেমন কোনো পরিবর্তন ছাড়াই (বা সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে) গঠন বা পলিতে সংরক্ষিত থাকে।
এসব জীবাশ্মে অন্তর্ভুক্ত:
- অ্যামিনো অ্যাসিড (amino acids)
- হাইড্রোকার্বন (hydrocarbons)
- ফ্যাটি অ্যাসিড (fatty acids)
- লিপিড (lipids)
- কার্বোহাইড্রেট (carbohydrates)
- এবং অন্যান্য জৈব যৌগের ডেরিভেটিভ (derivatives of organic compounds)
প্রাক-ক্যামব্রিয়ান (Pre-Cambrian) যুগের শিলার রাসায়নিক গঠন এসব রাসায়নিক জীবাশ্ম ধারণ করতে পারে।
২. ট্রেস জীবাশ্ম বা ইক্নোফসিল (Trace Fossils or Ichnofossils)
অনেক সময়, কোনো জীবের সরাসরি দেহাংশ পাওয়া না গেলেও, তাদের উপস্থিতির ইঙ্গিত (indications of prior existence) পাওয়া যায়। এমন জীবাশ্মকে ট্রেস জীবাশ্ম বা ইক্নোফসিল বলা হয়।
এতে অন্তর্ভুক্ত:
- প্রাণীর পায়ের ছাপ বা চলাচলের চিহ্ন (animal tracks or footprints)
- অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের গর্ত বা বাসস্থান (burrows of invertebrates)
- কপ্রোলাইট (coprolites) – অর্থাৎ জীবাশ্মৃত বিষ্ঠা (fossilized excreta)
- গ্যাস্ট্রোলিথ (gastroliths) – ডাইনোসরের পেটের পালিশ করা পাথর
- কাটা বা চিবানো হাড় (gnawed bones) ইত্যাদি
৩. ক্ষুদ্র জীবাশ্ম (Microfossils)
এই শ্রেণির জীবাশ্মগুলি অতি ক্ষুদ্র জীব (microscopic organisms) যেমন:
- ব্যাকটেরিয়া (bacteria)
- স্পোর এবং পরাগ কণা (spores and pollen grains)
- ছত্রাক ও শৈবালের স্পোর (fungal and algal spores)
- ফোরামিনিফেরা (foraminifera)
- ডায়াটম (diatoms)
- উদ্ভিদের ত্বক বা কাঠের ক্ষুদ্র অংশ (epidermal and wood fragments of plants)
এসব জীবাশ্ম সাধারণত সেডিমেন্টারি স্তরে (sedimentary deposits) সংরক্ষিত থাকে এবং ম্যাসারেশন (maceration) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেখা যায় — অর্থাৎ সেডিমেন্টকে নরম করে পরে ক্ষুদ্র জীবাশ্ম চিহ্নিত করা হয়।
জীবাশ্মবিদ্যা সম্পর্কিত আরও তথ্যের জন্য আমাদের ব্লগ ফলো করুন
৪. বৃহৎ জীবাশ্ম (Megafossils)
যেসব জীবাশ্মে উদ্ভিদের বড় অংশ যেমন—পাতা (leaf), কাণ্ড (stem), মূল (root), ফুল (flower), বীজ (seed) ইত্যাদি এবং প্রাণীর পুরো দেহ অথবা দেহাংশ সংরক্ষিত থাকে, সেগুলিকে বৃহৎ জীবাশ্ম (megafossils) বলা হয়।
এগুলো খালি চোখেই দেখা যায় এবং এগুলিই উদ্ভিদের বাহ্যিক গঠন (morphology) ও আভ্যন্তরীণ গঠন (anatomy) অধ্যয়নের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
বৃহৎ জীবাশ্মের প্রকারভেদ (Types of Megafossils)
বৃহৎ জীবাশ্মকে জীবাশ্ম গঠনের প্রকৃতির (nature of fossilisation) উপর ভিত্তি করে পাঁচটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়:
(a) চাপিত জীবাশ্ম (Compressions)
এগুলো এমন জীবাশ্ম যা ভূ-পলির উল্লম্ব চাপে (vertical pressure of sediments) চাপ খেয়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, পাতার টুকরো, কাণ্ড, বীজ ইত্যাদি চাপের ফলে ফ্ল্যাট হয়ে যায় এবং কার্বনের পাতলা স্তর (thin carbonaceous film) হিসেবে সংরক্ষিত থাকে, যেখানে বাইরের আকৃতির (external features) রেখাচিত্র দেখা যায়।
সাধারণত, অভ্যন্তরীণ গঠন (internal structure) সংরক্ষিত থাকে না, তবে কিছু ক্ষেত্রে কিউটিকল (cuticle), স্টোমাটা (stomata) ইত্যাদি দেখা যায়।
(b) ইম্প্রেশন বা ছাপ (Impressions)
ইম্প্রেশন (impression) হল কম্প্রেশনের বিপরীত (negative of a compression)। এখানে উদ্ভিদ অংশের কেবল ছাপ থাকে, কিন্তু কোনো জৈব পদার্থ (organic matter) থাকে না।
চাপ খাওয়া জীবাংশ ভূ-পলিতে থেকে যায়, এবং সেই পলি শক্ত হয়ে গেলে তাকে ভেঙে খোলার সময় নেতিবাচক ছাপ (negative imprint) দেখা যায়—এটাই ইম্প্রেশন।
(c) পেট্রিফ্যাকশন (Petrifactions)
এই ধরনের জীবাশ্ম হল সবচেয়ে উৎকৃষ্ট (best), তবে সবচেয়ে বিরল (rarest)। এতে উদ্ভিদের বাহ্যিক রূপের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ গঠনও সংরক্ষিত থাকে।
টিস্যুর মধ্যে খনিজ পদার্থ যেমন—সিলিকা (SiO₂), ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO₃), ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট (MgCO₃), লৌহ (FeS) ইত্যাদি ঢুকে পড়ে কোষীয় গঠন বজায় রাখে।
এই জীবাশ্মকে ছোট ছোট টুকরো করে কাটা যায় এবং শারীরতাত্ত্বিক (anatomical) অধ্যয়নের জন্য স্লাইড প্রস্তুত করা যায়।
(d) ছাঁচ (Molds) এবং ছাঁচপূর্ণ কপি বা ঢালাই (Casts or Incrustations)
এই প্রকারে উদ্ভিদ অংশের চারপাশে লোহা (iron) ও কার্বনেট (carbonate) খনিজের কঠিন আবরণ তৈরি হয়।
অভ্যন্তরীণ গঠন ধ্বংস হয়ে একটি ফাঁপা গহ্বর (cavity) তৈরি হয়, যেটি চারপাশের পলি দ্বারা পূর্ণ হয়ে যায়।
- যে বাহ্যিক চেহারা সংরক্ষিত থাকে, তাকে বলা হয় মোল্ড (Mold)
- আর অভ্যন্তরের স্থান পূরণ করে গঠিত অংশকে বলা হয় কাস্ট (Cast)
৫. উপ-জীবাশ্ম (Sub-Fossils)
একটি জীবাশ্ম (fossil) তৈরি হতে নির্দিষ্ট সময় প্রয়োজন। যদি কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণীর অংশ সম্পূর্ণ জীবাশ্মে রূপান্তরিত হওয়ার আগেই খনন (excavated) করা হয়, তবে তাকে উপ-জীবাশ্ম (sub-fossil) বলা হয়।
🔸 কয়লা (coal) হল একটি পূর্ণরূপে চ্যাপ্টা জীবাশ্ম (compressed fossil),
🔸 আর পিট (peat) হল কয়লার প্রাথমিক স্তর (early stage of coalification), এবং এটি উপ-জীবাশ্মের উদাহরণ।
৬. মিথ্যা জীবাশ্ম (Pseudofossils)
অনেক সময় এমন কিছু অজৈব শিলা (inorganic rocks) দেখা যায়, যেগুলো দেখতে জীবাশ্মের মতো মনে হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এগুলো শুধুই খনিজ পদার্থের সঞ্চয় (mineral deposition)।
🔸 এই ধরনের গঠন দেখতে উদ্ভিদ বা প্রাণীর অবশিষ্টাংশের মতো হলেও তা আসলে প্রকৃত জীবাশ্ম নয়।
🔸 এদের পিউডোফসিল (pseudofossils) বা মিথ্যা জীবাশ্ম বলা হয়।
৭. স্থানান্তরিত জীবাশ্ম (Derived Fossils)
কখনও কখনও জীবাশ্মিত জীবের অংশ এমন একটি ভূ-স্তরে (stratum) পাওয়া যায়, যা ঐ জীবাশ্মের প্রকৃত সময়কাল অপেক্ষা বেশি পুরনো বা বেশি নতুন হয়।
🔸 এসব জীবাশ্মকে বলা হয় ডেরাইভড ফসিল (Derived Fossils) বা স্থানান্তরিত জীবাশ্ম।
🔸 এরা পৃথিবীর টেকটনিক গতিবিধি (tectonic movement) বা অন্যান্য ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয় (geological upheaval)-এর ফলে তাদের আসল অবস্থান থেকে সরে গিয়ে অন্য স্তরে পৌঁছায়।
জীবাশ্মের বিস্ময়কর জগৎ
প্রতিটি জীবাশ্মই আমাদের পৃথিবীর ইতিহাসের একেকটি অধ্যায়ের সাক্ষ্য বহন করে
৮. কোল বল (Coal Balls)
কোল বল হল গাছের অংশবিশেষ যুক্ত গোলাকার পেট্রিফায়েড বল (petrified spherical balls)।
🔹 এগুলি তখন গঠিত হয় যখন জলাভূমিতে (swamps) গাছপালার মৃতাংশ (plant debris)-এর মধ্যে ক্যালসিয়াম বা ম্যাগনেশিয়ামের কার্বনেট (CaCO₃ বা MgCO₃) প্রবেশ করে।
🔹 এই খনিজ প্রবেশের ফলে, ঐ জৈব পদার্থ আর কয়লায় রূপান্তরিত হতে পারে না এবং কোল বল তৈরি হয়।
বৈশিষ্ট্য:
- আকারে কয়েক সেন্টিমিটার থেকে কয়েক মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
- ওজন কয়েক পাউন্ড থেকে শুরু করে আরও বেশি হতে পারে।
- এগুলি সাধারণত নির্দিষ্ট অঞ্চলেই (localized regions) পাওয়া যায়।
🔸 প্যালিওবটানিক্যাল (palaeobotanical) গবেষণায় কোল বল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৯. পেপার কয়লা (Paper Coal)
পেপার কয়লা হল পাতলা মৃত পাতার স্তর (thin dead leaves) যা একটি জৈব ম্যাট্রিক্সের (organic matrix) মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে।
🔹 পাতার অভ্যন্তরীণ টিস্যু ধ্বংস হয়ে যায়, ফলে এতে শুধুমাত্র কিউটিকলের স্তর (layers of cuticles) থাকে।
🔹 মাঝে মাঝে এই স্তরগুলোর মাঝে পচা কাণ্ড (decomposed stems) থাকে।
📍 উদাহরণ: রাশিয়ার টুলা (Toula) অঞ্চলের তোভারকোভো (Tovarkovo)-তে পাওয়া কার্বন-সমৃদ্ধ লাইমস্টোন স্তর (carbonaceous limestone horizon) একটি বিখ্যাত পেপার কয়লার উদাহরণ।
১০. অ্যাম্বার (Amber)
অ্যাম্বার হল প্রাচীন শঙ্কুবৃক্ষের (extinct coniferous trees), বিশেষ করে Pinus succinifera গাছের জীবাশ্মিত রেজিন (fossilised resin)।
🔹 কীভাবে তৈরি হয়:
- গাছের গায়ে কীটপতঙ্গের আক্রমণে যে রেজিন (resinous exude) বের হয়, তা মাটিতে পড়ে জমা হয়।
- সময়ের সাথে সেটি শক্ত হয়ে অ্যাম্বারে রূপান্তরিত হয়।
🔸 প্রায়ই অ্যাম্বারের মধ্যে পোকামাকড় (insects) ও ফুল (flowers) সংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়।
🔹 অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
অ্যাম্বার অনেক মূল্যবান এবং গহনা তৈরিতে (jewellery) ব্যবহৃত হয়।
১১. নির্দেশক জীবাশ্ম (Index Fossils)
নির্দেশক জীবাশ্ম হল এমন জীবাশ্ম, যেগুলি একই স্তরের অন্যান্য জীবাশ্মের বয়স নির্ধারণে সাহায্য করে (help in dating)।
🔹 এই জীবাশ্মগুলো সাধারণত—
- ভৌগোলিকভাবে বিস্তৃত হয় (widely distributed geographically),
- কিন্তু খুব সীমিত সময়ের মধ্যেই (limited in time span) অস্তিত্ব ছিল,
- এবং এদের রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত গঠন (distinct characteristic features)।
উদাহরণ:
Myrepollenites
→ Eocene যুগের একটি নির্দেশক বা চিহ্নিতকারী জীবাশ্ম
🔸 এছাড়াও—
Foraminifera (সামুদ্রিক এককোষী প্রাণী),
Pollen grains (পরাগকণা),
Spores (বীজাণু)—এসবকেও নির্দেশক জীবাশ্ম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
📌 নির্দেশক জীবাশ্ম ভূতাত্ত্বিক সময় নির্ধারণে (geological dating) এবং ভূগঠনের তুলনামূলক অধ্যয়নে (stratigraphic correlation) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
✅ Fossilization-এর গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রক্রিয়া
🔹 ১. প্রতিস্থাপন তত্ত্ব (Replacement Theory)
বর্ণনা (Explanation):
এই প্রক্রিয়ায়, জীবের মূল কঠিন অংশ (original hard part of the plant or animal), যেমন হাড়, দাঁত বা কাঠ, ধীরে ধীরে জলে (water) দ্রবীভূত হয়ে যায়। এরপর সেই জায়গায় খনিজ পদার্থ (minerals) এবং অন্যান্য জৈব পদার্থ (matter) প্রতিস্থাপিত (replaced) হয়।
যেমন Silica (SiO₂), Calcium carbonate (CaCO₃) বা Iron pyrites (FeS₂) দ্বারা প্রতিস্থাপিত (Replaced) হয়।
বহিঃআকৃতি ও অভ্যন্তরীণ গঠন (External and internal structure) অনেকাংশে অপরিবর্তিত থাকে।
🔸 উদাহরণ:
Petrified wood – এখানে কাঠের মূল টিস্যুগুলি সিলিকা (SiO₂) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।
✅ মূল কথা:
"Replacement occurs when water dissolves the original hard part and replaces it with minerals."
🔹 ২. অনুপ্রবেশ তত্ত্ব (Infiltration Theory)
বর্ণনা (Explanation):
এই প্রক্রিয়ায় খনিজ পদার্থসমৃদ্ধ জল (mineral-rich water) জীবের কোষপ্রাচীর (cell wall) দিয়ে ভিতরে অনুপ্রবেশ (infiltration) করে। পরে সেই খনিজ পদার্থ কোষের ভিতরে বর্ষণ (precipitation) বা জমাট বাঁধে। এতে করে অভ্যন্তরীণ গঠন (internal structure) খুব সুন্দরভাবে fossil রূপে সংরক্ষিত হয়।
প্রক্রিয়া (Process):
- জলভিত্তিক খনিজ পদার্থ (যেমন CaCO₃, MgCO₃, FeS₂) জীবাশ্মের ছিদ্রে ঢুকে পড়ে
- এই খনিজ পদার্থ অভ্যন্তরীণ গঠনের ভিতরে জমা হয়, কিন্তু মূল উপাদান প্রতিস্থাপিত হয় না
- এর ফলে অভ্যন্তরীণ গঠন (Internal details) অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে সংরক্ষিত থাকে
🔸 উদাহরণ (Example):
Coal balls – যেখানে উদ্ভিদ অংশে কার্বোনেট খনিজ অনুপ্রবেশ করেছে।
উদ্ভিদের কিছু Fossilized stem ও tissues – বিশেষ করে জলাভূমিতে (Swamp) পাওয়া যায়।
✅ মূল কথা:
"Fossilization occurs due to infiltration and precipitation of minerals through cell walls."
📝 সারসংক্ষেপ (Comparison Table)
প্রক্রিয়া | প্রধান ধাপ | কী ঘটে | উদাহরণ |
---|---|---|---|
Replacement | জল আসল অংশ গলিয়ে দেয় এবং খনিজ বসিয়ে দেয় | আসল উপাদান হারিয়ে যায়, খনিজ দ্বারা প্রতিস্থাপন হয় | Petrified wood |
Infiltration & Precipitation | খনিজ জল কোষের ভিতরে অনুপ্রবেশ করে ও সেখানে জমে যায় | আসল গঠন অক্ষত থেকে অভ্যন্তরীণ গঠন সংরক্ষিত হয় | Coal balls |
📌 গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: এই দুটি প্রক্রিয়াই সাধারণত পানির উপস্থিতিতে ঘটে এবং খনিজ পদার্থের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে। প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ায় মূল উপাদান সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়, অন্যদিকে অনুপ্রবেশ প্রক্রিয়ায় মূল গঠন সংরক্ষিত থাকে।
✅ জীবাশ্মায়নকে প্রভাবিতকারী উপাদানসমূহ
(Factors Affecting Fossilization)
🔹 1. উদ্ভিদের প্রকৃতি (Nature of Plant)
যেসব উদ্ভিদের কঠিন অংশ (hard parts) যেমন – কাঠ, কাষ্ঠল কান্ড, ঘন টিস্যু থাকে, সেগুলোর fossil হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
➡ উদাহরণ: Gymnosperms, Pteridophytes প্রায়ই fossil আকারে পাওয়া যায়।
🔹 2. দ্রুত পচন রোধ করে দ্রুত মাটিচাপা পড়া (Rapidity of Burial)
যদি উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহ দ্রুত sediments (আবরণ বা পলি) এর নিচে চাপা পড়ে, তাহলে microbial decay (অণুজীবীয় পচন) কম হয় এবং fossilization হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
🔹 3. অক্সিজেনের স্বল্পতা (Low Amount of Available O₂)
যেসব পরিবেশে oxygen কম (যেমন জলাভূমি বা swamp), সেখানে জীবাশ্ম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, অক্সিজেনের উপস্থিতিতে পচন (oxidative decay) হয়, যা fossilization রোধ করে।
🔹 4. খনিজীকরণের পরিমাণ (Extent of Mineralization)
যত বেশি mineral-rich water প্রবাহিত হয়, তত বেশি mineralization ঘটে। এটি জীবের দেহাংশকে fossil এ রূপান্তরে সাহায্য করে।
➡ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ: Silica (SiO₂), Calcium carbonate (CaCO₃), Iron pyrite (FeS₂)
🔹 5. স্বয়ং-পচন ও অণুজীবীয় ক্ষয় প্রতিরোধ (Prevention of Autocatalytic or Microbial Decomposition)
Autocatalysis বা নিজের এনজাইমের মাধ্যমে পচন এবং bacteria বা fungi দ্বারা ক্ষয় হলে fossilization ব্যাহত হয়।
➡ তাই যদি এই পচন রোধ করা যায় (যেমন জলাভূমিতে অক্সিজেনের অভাবে), fossil হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
📌 সারসংক্ষেপ টেবিল (Summary Table)
উপাদান (Factor) | ব্যাখ্যা (Explanation) |
---|---|
Nature of plant | শক্ত টিস্যু থাকলে fossil হওয়া সহজ |
Rapidity of burial | দ্রুত পলি চাপলে পচন বন্ধ হয়ে যায় |
Low availability of oxygen | অক্সিজেনের অভাবে পচন কমে যায় |
Extent of mineralization | খনিজ জমে fossil গঠনে সহায়তা করে |
Prevention of microbial decomposition | পচন রোধে fossilization সম্ভব হয় |
📢 মনে রাখবেন: জীবাশ্মায়নের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো দ্রুত সমাধিস্থকরণ (rapid burial) এবং অক্সিজেনের অভাব (anaerobic conditions)
📘 বিভিন্ন ধরনের জীবাশ্ম: শ্রেণিবিন্যাস ও ব্যাখ্যা
ক্রমিক নং | জীবাশ্মের নাম (Fossil Type) | সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা (Description in Bengali) | উদাহরণ / বৈশিষ্ট্য |
---|---|---|---|
1 | Chemical Fossils | জৈব যৌগের অবশিষ্টাংশ যা পরিবর্তন না ঘটেই সংরক্ষিত থাকে। | অ্যামিনো অ্যাসিড, হাইড্রোকার্বন, লিপিড ইত্যাদি |
2 | Trace Fossils (Ichnofossils) | প্রাণীর চলাচল বা কার্যকলাপের ছাপযুক্ত জীবাশ্ম। | পদচিহ্ন, গর্ত, গ্যাসট্রোলিথ, কপ্রোলাইটস |
3 | Microfossils | অতি ক্ষুদ্র জীব বা উদ্ভিদের জীবাশ্ম যা শুধুমাত্র মাইক্রোস্কোপে দেখা যায়। | ব্যাকটেরিয়া, পরাগকণা, ফোরামিনিফেরা |
4 | Megafossils | বৃহৎ আকারের জীবাশ্ম যা খালি চোখে দেখা যায়। | পাতার ছাপ, কান্ড, ফুল, বীজ ইত্যাদি |
4a | → Compressions | গাছের অংশ চাপা পড়ে পাতলা কার্বন স্তরে রূপান্তরিত। | পাতার চাপা পড়া জীবাশ্ম |
4b | → Impressions | Compression-এর নেতিবাচক ছাপ; কোনো জৈব পদার্থ থাকে না। | খনিজ মাটির উপর পাতার ছাপ |
4c | → Petrifactions | খনিজ পদার্থ প্রবেশ করে কোষীয় গঠনসহ সম্পূর্ণ রূপে সংরক্ষিত জীবাশ্ম। | কাঠ বা কান্ডের পেট্রিফায়েড রূপ |
4d | → Casts & Molds | বাহ্যিক ছাঁচ (mold) ও অভ্যন্তরীণ কাঠামোর ছাপ (cast) তৈরি হয়। | গাছের অংশের খনিজ ছাঁচ |
5 | Sub-Fossils | পূর্ণ জীবাশ্মে রূপান্তরিত হওয়ার আগেই খননকৃত জৈব পদার্থ। | পিট (peat), কয়লা (coal) |
6 | Pseudofossils | দেখতে জীবাশ্মের মতো কিন্তু প্রকৃতপক্ষে খনিজ পদার্থ দ্বারা গঠিত ভ্রান্ত গঠন। | খনিজ সঞ্চয়, উদ্ভিদ-সদৃশ শিলা |
7 | Derived Fossils | ভূ-গত পরিবর্তনের ফলে অন্য স্তরে স্থানান্তরিত জীবাশ্ম। | ভিন্ন যুগের স্তরে পাওয়া জীবাশ্ম |
8 | Coal Balls | গাছের অংশবিশেষ যুক্ত গোলাকৃতি পেট্রিফায়েড বল যা কয়লায় রূপান্তরিত হয়নি। | CaCO₃ বা MgCO₃ দ্বারা গঠিত বল |
9 | Paper Coal | পাতলা পাতার স্তর যা কিউটিকল ও পচা কান্ডসহ একাধিক স্তর তৈরি করে। | Toula, Russia-র তোভারকোভো অঞ্চল |
10 | Amber | প্রাচীন শঙ্কুবৃক্ষের fossilised resin যা অনেক সময় পোকামাকড় সংরক্ষণ করে। | Pinus succinifera-এর রেজিন, গহনার উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত |
11 | Index Fossils | নির্দিষ্ট স্তরের জীবাশ্মের সময় নির্ধারণে সহায়ক জীবাশ্ম। | Monograptus (Lower Devonian), Myrepollenites (Eocene), Foraminifera |
📘 Palaeobotany MCQ Test (20 Marks)
Total Questions: 20 | Each question carries 1 mark
1. The study of fossil plants is called —
2. The word "fossil" is derived from Latin "fodere" which means —
3. Who is known as the father of Palaeobotany in India?
4. Which of the following is not a type of fossil?
5. Fossils formed from infiltration of silica and calcium carbonate are called —
6. Fossilized resin of extinct pine trees is called —
7. Chemical fossils include —
8. A fossil with flattened outline formed by pressure is —
9. Impressions are —
10. Which of the following is an ichnofossil?
11. Which of these is a microfossil?
12. Paper coal is mainly composed of —
13. Sub-fossils are —
14. Which one is not a plant fossil?
15. Coal balls contain —
16. Derived fossils are found in —
17. Cast is formed when —
18. Which of these is widely used in index fossils?
19. Monograptus is an index fossil of —
20. Peat is classified as —
Correct answers are highlighted in green, wrong answers in red.