লিভার ফ্লুকের এক্সক্রেটরি সিস্টেম (Excretory System in Liver-Fluke)
পর্ব (Phylum): Platyhelminthes | পরজীবী (Parasite): এটি ভেড়া ও গরুর যকৃতের পিতনালিতে (bile duct of liver) বাস করে | এক্সক্রেটরি সিস্টেম: প্রোটোনেফ্রিডিয়াল (Protonephridial system)
🔶 ১. প্রোটোনেফ্রিডিয়াল সিস্টেম (Protonephridial System)
- এটি একটি বিশেষ ধরনের এক্সক্রেটরি ও অস্মো-নিয়ন্ত্রণকারী (osmoregulatory) ব্যবস্থা
- সিস্টেমটি তৈরি হয়েছে অসংখ্য ফ্লেম-সেল (Flame cells) ও এক্সক্রেটরি ডাক্ট (Excretory ducts) দ্বারা
- যেহেতু লিভার ফ্লুক এন্ডোপ্যারাসাইট (endoparasite) হিসেবে যকৃতের ভিতর থাকে, তার দেহের ভিতরের অস্মোটিক চাপ (osmotic pressure) হোস্টের অনুরূপ হয়
🔶 ২. ফ্লেম-সেল (Flame Cell)
➡️ গঠন ও অবস্থান
- এগুলি মেসেনকাইম (Mesenchyme) কোষ থেকে তৈরি হয় এবং সারা শরীরে ছড়িয়ে থাকে নির্দিষ্ট বিন্যাসে (flame-cell arrangement)
- দেখতে বাল্বের (bulb-like) মতো এবং কোষ থেকে ছদ্মপদ (pseudopodia) বের হয় যা পাশের টিস্যুতে প্রসারিত
➡️ অভ্যন্তরীণ গঠন
- প্রতিটি ফ্লেম-সেলে একটি বড় নিউক্লিয়াস (nucleus) ও অন্যান্য অঙ্গানু (organelles) থাকে
- ভিতরে একটি লুমেন (lumen) থাকে যাতে ফ্ল্যাজেলা (flagella) ঝুলে থাকে
- প্রতিটি ফ্ল্যাজেলাম (flagellum) সাইটোপ্লাজমে (cytoplasm) থাকা বেসাল গ্রানিউল (basal granule) থেকে উৎপন্ন হয়
- এই ফ্ল্যাজেলা গুলোর আন্দোলন (undulation) দেখতে আগুনের শিখার মতো, তাই নাম ফ্লেম-সেল
➡️ ডাক্টে সংযোগ
লুমেনটি সরু একটি ক্যাপিলারি (capillary) টিউবে পরিণত হয় যা পরে বড় এক্সক্রেটরি ডাক্টে মেশে
🔶 ৩. এক্সক্রেটরি ডাক্টের বিন্যাস (Duct Arrangement)
- সরু টিউবগুলো মিলিত হয়ে বড় এক্সক্রেটরি ভেসেল (excretory vessels) তৈরি করে
- এগুলো থেকে ৪টি প্রধান ট্রাঙ্ক (trunks) গঠিত হয়:
- ২টি ডরসাল (dorsal)
- ২টি ভেন্ট্রাল (ventral)
- সব ট্রাঙ্ক একসাথে মেইন লংগিচুডিনাল এক্সক্রেটরি ক্যানাল (main longitudinal excretory canal) তৈরি করে
- এই প্রধান ক্যানালটি দেহের পিছন পর্যন্ত গিয়ে টার্মিনাল এক্সক্রেটরি পোর (terminal excretory pore) দিয়ে বাইরে খোলে
- পিছনের এক্সক্রেটরি ভেসেলগুলো সরাসরি এই ক্যানালে খোলে
- মূল ক্যানাল ছাড়া সব এক্সক্রেটরি ডাক্টের ভিতরে সিলিয়া (cilia) থাকে যা বর্জ্য পদার্থ চালান করে
🔶 ৪. বর্জ্য অপসারণ প্রক্রিয়া (Physiology of Excretion)
➡️ প্রধান এক্সক্রেটরি প্রোডাক্ট (Waste Products)
- ফ্যাটি অ্যাসিড (Fatty acids)
- কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂)
- অ্যামোনিয়া (Ammonia)
➡️ প্রক্রিয়া (Steps)
- বর্জ্য পদার্থ মেসেনকাইম দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে
- এগুলি ফ্লেম-সেলের সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করে, যেখানে alkaline phosphatase এনজাইম সহায়তা করে
- ফ্ল্যাজেলার নড়াচড়ায় বর্জ্য লুমেনে (lumen) প্রবেশ করে
- এরপর ক্রমান্বয়ে:
- ন্যারো টিউব → বড় ভেসেল → এক্সক্রেটরি ট্রাঙ্ক → মেইন ক্যানাল → বাইরের পোর দিয়ে নির্গত হয়
🔶 ৫. প্রোটোনেফ্রিডিয়াল সিস্টেমের কাজ (Functions)
নাইট্রোজেনযুক্ত ও বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে
শরীরের জল ও লবণের ভারসাম্য বজায় রাখে
📝 সারসংক্ষেপ (Summary)
লিভার ফ্লুকের দেহে থাকা ফ্লেম-সেল ভিত্তিক প্রোটোনেফ্রিডিয়াল সিস্টেম একদিকে যেমন বর্জ্য পদার্থ অপসারণে (excretion) সাহায্য করে, তেমনই জল ও লবণের ভারসাম্য (osmoregulation) রক্ষা করতেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি উন্নত ও জটিল এক্সক্রেটরি নেটওয়ার্ক যা একটি পরজীবীর দেহে অভিযোজনের দারুণ উদাহরণ।
📢 গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: ফ্লেম-সেলের নামকরণ হয়েছে এর ভিতরের ফ্ল্যাজেলার নড়াচড়ার কারণে যা মাইক্রোস্কোপে দেখতে মোমবাতির শিখার মতো মনে হয়
🔶 মূল কাজগুলি (Main Functions)
১. বর্জ্য অপসারণ (Excretion of Waste Materials)
ফ্লেম-সেল দেহে বিপাকীয় প্রক্রিয়া (metabolism) ফলে তৈরি হয় বর্জ্য পদার্থ (waste products) যেমন:
- অ্যামোনিয়া (Ammonia) → প্রোটিন ভাঙলে তৈরি হয়
- ফ্যাটি অ্যাসিড (Fatty acids) → লিপিড ভাঙলে তৈরি হয়
- কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) → কোষীয় শ্বসনের ফল
➡️বর্জ্য পদার্থগুলো মেসেনকাইম টিস্যু থেকে নিচু ঘনত্বের দিকে ছড়িয়ে পড়ে (passive diffusion)
➡️ তারা ফ্লেম-সেলের প্লাজমা মেমব্রেন (plasma membrane) দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে
📌 এই পর্যায়ে কিছু বিশেষ এনজাইম সাহায্য করে, যেমন:
➡️ Alkaline phosphatase, যা নির্বাচিত উপায়ে (selective transfer) ফ্লেম-সেলের ভিতরে বর্জ্য টেনে আনে
➡️ লুমেনে ফ্ল্যাজেলা (flagella) থাকে — ছোট চুলের মতো গঠন যা সারাক্ষণ কাঁপতে থাকে (beating motion)
📌 এই কাঁপন (wave-like motion) বর্জ্য তরলকে ঠেলে ঠেলে লুমেনের ভেতর প্রবাহিত করে
➡️ লুমেনের ভিতরের সিলিয়া ও ডাক্ট ফ্লুইডগুলো প্রধান এক্সক্রেটরি ক্যানালের (main excretory canal) দিকে সরিয়ে নিয়ে যায়
➡️ ফ্লেম-সেল থেকে বের হওয়া ন্যারো টিউব (narrow tubule)-এর মাধ্যমে বর্জ্য গিয়ে মেশে:
বড় এক্সক্রেটরি ভেসেল (excretory vessel) →
তারপর এক্সক্রেটরি ট্রাঙ্ক (trunk) →
শেষে মেইন লংগিচুডিনাল ক্যানাল (main longitudinal canal) →
এবং সবশেষে টার্মিনাল এক্সক্রেটরি পোর (terminal excretory pore) দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়
২. অস্মো-নিয়ন্ত্রণ (Osmoregulation)
যেহেতু ফ্লুক একটি এন্ডোপ্যারাসাইট (endoparasite), তার আশপাশের পরিবেশের জল ও লবণের ঘনত্ব (water and salt concentration) তার শরীরের উপর প্রভাব ফেলে
ফ্লেম-সেল শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত জল ও দ্রবণীয় পদার্থ ফিল্টার করে বাইরে বের করে, যাতে অস্মোটিক ব্যালান্স (osmotic balance) বজায় থাকে
📢 মনে রাখবেন: ফ্লেম-সেলের ফ্ল্যাজেলার চলাচলই বর্জ্য পদার্থের চলনে প্রধান ভূমিকা রাখে