ক্রোমোজোম (Chromosome)
ক্রোমোজোম কী?
ক্রোমোজোম হল সুতার মতো গঠনের একধরনের নিউক্লিয়ার উপাদান, যা প্রধানত DNA এবং protein (প্রোটিন) দিয়ে তৈরি। এগুলো সাধারণত কোশ বিভাজনের সময় dye দিয়ে রঞ্জিত (stain) করলে মাইক্রোস্কোপে দৃশ্যমান হয়।
শব্দের অর্থ:
"Chromosome" শব্দটি এসেছে দুটি গ্রীক শব্দ থেকে—
• Chrom = রং (colour)
• Soma = দেহ (body)
অর্থাৎ "রঙিন দেহ"।
ক্রোমোজোমের আবিষ্কার ও নামকরণ:
- ১৮৪২ সালে Karl Nagli প্রথম উদ্ভিদের কোষে রড-আকৃতির (rod-like) ক্রোমোজোম দেখতে পান।
- ১৮৮৮ সালে W. Waldeyer এই গঠনের নাম দেন chromosome।
ক্রোমোজোম এর কাজ:
- এটি জিনগত তথ্য (genetic information) বহন করে।
- বংশগতির (heredity) বাহক।
- বিবর্তন (evolution) ও প্রজনন (reproduction)-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- পরিবেক্তি (mutation) ও বৈচিত্র্য (variation) সৃষ্টি করে।
ক্রোমোজোম এর সংখ্যা (Chromosome Number):
1. প্রোক্যারিওটস (Prokaryotes):
সাধারণত একটি মাত্র ক্রোমোজোম থাকে।
2. ইউক্যারিওটস (Eukaryotes):
এদের বহুসংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে।
Haploid (n) ও Diploid (2n) কী?
• Haploid (n): একটি গ্যামেটিক কোশে (যেমন: শুক্রাণু, ডিম্বাণু) যতগুলো ক্রোমোজোম থাকে, তাকেই হ্যাপলয়েড সেট বলে।
• Diploid (2n): দেহকোশে (somatic cells) দুটি সেট থাকে — এক মা থেকে, এক বাবা থেকে।
উদাহরণ: মানুষের ক্ষেত্রে n = 23 → 2n = 46
উদাহরণস্বরূপ টেবিল অনুসারে কিছু জীবের ক্রোমোজোম সংখ্যা:
🧬 প্রাণীজগৎ (Animals):
সাধারণ নাম | বৈজ্ঞানিক নাম | ক্রোমোসোম সংখ্যা |
---|---|---|
মানুষ (Man) | Homo sapiens | 46 |
গরিলা (Gorilla) | Gorilla gorilla | 48 |
পায়রা (Pigeon) | Columba livia | 80 |
খরগোশ (Rabbit) | Oryctolagus cuniculus | 44 |
ব্যাঙ (Frog) | Rana esculenta | 26 |
মশা (Mosquito) | Culex pipiens | 6 |
মাছি (House fly) | Musca domestica | 12 |
👉 লক্ষ্য করো, মানুষের চেয়ে পায়রার ক্রোমোজোম সংখ্যা অনেক বেশি, তাই বলা হয়েছে ক্রোমোজোম সংখ্যার সঙ্গে কোনো প্রাণীর অভিব্যক্তি স্তরের সরাসরি সম্পর্ক নেই।
🌿 উদ্ভিদজগৎ (Plants):
সাধারণ নাম | বৈজ্ঞানিক নাম | ক্রোমোসোম সংখ্যা |
---|---|---|
বাঁধাকপি (Cabbage) | Brassica oleracea | 18 |
পেঁয়াজ (Onion) | Allium cepa | 16 |
কফি (Coffee) | Coffea arabica | 44 |
আখ (Sugarcane) | Saccharum officinarum | 80 |
আলু (Potato) | Solanum tuberosum | 48 |
উপসংহার:
- প্রতিটি প্রজাতির নিজস্ব নির্দিষ্ট ক্রোমোজোম সংখ্যা থাকে।
- ক্রোমোজোম সংখ্যা কোনো জীব কত উন্নত তা নির্ধারণ করে না।
- ক্রোমোজোম হলো জীববিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট, যা আমাদের জিনগত বৈশিষ্ট্য বহন ও বংশপরম্পরায় পৌঁছে দেয়।
🧬 ক্রোমোজোমের গঠন বা গঠনবিন্যাস (Morphology of Chromosomes)
🧪 অবস্থান ও পর্যায়:
ক্রোমোজোমের গঠন সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায় মাইটোসিসের (Mitosis) মেটাফেজ (Metaphase) ও অ্যানাফেজ (Anaphase) পর্যায়ে।
📏 আকার (Size):
- ক্রোমোজোমের আকার জীবভেদে ভিন্ন হয়।
- একটি কোষের সব ক্রোমোজোম একই আকারের হয় না। কিছু বেশ বড়, আবার কিছু খুব ছোট হতে পারে।
- সবচেয়ে বড় ক্রোমোজোম পাওয়া যায়: 👉 Lampbrush Chromosomes, যা নির্দিষ্ট কিছু কশেরুক (vertebrate) প্রাণীর ডিম্বাণু (oocytes)-তে দেখা যায়।
উদাহরণ | ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্য |
---|---|
Drosophila (ড্রোসোফিলা/ফলের মাছি) | ৩ মাইক্রোমিটার (µm) |
Man (মানুষ) | ৫ µm |
Maize (ভুট্টা) | ৮ µm |
🔷 আকৃতি (Shape):
ক্রোমোজোমের আকৃতি নির্ভর করে Centromere (সেন্ট্রোমিয়ার)-এর অবস্থানের ওপর।
🔹 ক্রোমোজোম ৪ ধরনের হয়:
ধরন | নাম | সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান | আকার |
---|---|---|---|
(i) | Telocentric | একেবারে প্রান্তে (end) | রডের মতো (Rod-like) |
(ii) | Acrocentric | খুব কাছাকাছি প্রান্তে, ছোট বাহু প্রায় অদৃশ্য | Rod-like |
(iii) | Submetacentric | মাঝামাঝি থেকে একটু সরে | 'J' বা 'L' আকৃতির |
(iv) | Metacentric | ঠিক মাঝখানে | 'V' আকৃতির, সমান দুই বাহু |
🧬 ক্রোমোজোমের গঠন (Structure of Chromosome)
Cytogenetics (সাইটোজেনেটিক্স)-এর মাধ্যমে ক্রোমোজোমের বিভিন্ন অংশ শনাক্ত করা হয়, বিশেষ করে মাইটোসিস (Mitosis) এর সময়, যখন ক্রোমোজোম সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয়।
🔹 1. ক্রোমাটিড (Chromatid):
- মেটাফেজ (Metaphase) পর্যায়ে প্রতিটি ক্রোমোসোম দেখতে দুটি সমান, দণ্ডাকার গঠনবিশিষ্ট হয়। এই গঠন দুটিকে বলে ক্রোমাটিড (Chromatid)।
- দুইটি ক্রোমাটিড সেন্ট্রোমিয়ার (Centromere)-এর মাধ্যমে একে অপরের সাথে জোড়া থাকে।
- প্রতিটি ক্রোমাটিড একটি পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ অণু (DNA molecule) ধারণ করে।
- অ্যানাফেজ (Anaphase) পর্যায়ে দুইটি ক্রোমাটিড আলাদা হয়ে বিপরীত মেরুর দিকে চলে যায় এবং প্রতিটি আলাদা ক্রোমোজোম হয়ে ওঠে।
🔹 2. ক্রোমোনিমা (Chromonema):
- প্রোফেজ (Prophase) পর্যায়ে, যখন ক্রোমোজোম ঘনীভূত (condensed) হতে শুরু করে, তখন ক্রোমাটিডগুলো পাতলা সুতো বা ফিলামেন্ট (Thin filaments)-এর মতো দেখায়।
- তখন এগুলোকে বলা হয় ক্রোমোনিমা (Chromonema)।(বহুবচনে Chromonemata)
- এটি হল সেই অংশ যা জিন (Gene) বহন করে, অর্থাৎ ক্রোমোজোমের কার্যকরী (functional) অংশ।
🔹 3. ক্রোমোমিয়ার (Chromomere):
- ইন্টারফেজ (Interphase) পর্যায়ে, ক্রোমোনিমার উপর কিছু দানা বা গুটির মতো (Bead-like) গঠন দেখা যায়, যেগুলোকে বলে ক্রোমোমিয়ার (Chromomeres)।
- এগুলো হল:
- ঘন ক্রোমাটিন (Condensed chromatin) পদার্থের গুচ্ছ, এবং
- ডিএনএ-এর ভাঁজকৃত (Folded regions) অংশ।
- Polythene Chromosome-এ এদের সহজেই দেখা যায়।
- কিন্তু মেটাফেজে এই গঠনগুলো এতটাই ঘন হয়ে যায় যে দৃশ্যমান থাকে না।
🔹 4. সেন্ট্রোমিয়ার ও কাইনেটোকোর (Centromere and Kinetochore):
🧲 সেন্ট্রোমিয়ার (Centromere) / প্রাইমারি কনস্ট্রিকশন (Primary Constriction):
- ক্রোমোজোমের এমন একটি স্থান, যেখানে একপ্রকার গর্ত বা সংকোচন (Constricted region) দেখা যায়, তাকে সেন্ট্রোমিয়ার (Centromere) বলে।
- এর কাজ:
- মাইক্রোটিউবিউল (Microtubule) যুক্ত হওয়ার স্থান হিসেবে কাজ করে,
- এবং দুটি বোন ক্রোমাটিড (Sister chromatids)-কে একত্রে ধরে রাখে।
🌀 কাইনেটোকোর (Kinetochore):
- Centromeric DNA-তে কিছু বিশেষ প্রোটিন (Special proteins) যুক্ত হয়ে একটি ডিস্ক-আকৃতির (Disc-shaped) গঠন তৈরি করে, যাকে বলে কাইনেটোকোর (Kinetochore)।
- ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে (Electron microscope) কাইনেটোকোর দেখতে পাওয়া যায় তিনটি স্তরে (Trilaminar):
- বাইরের স্তর (Dense outer protein layer),
- মধ্য স্তর (Middle layer of low density),
- ভিতরের স্তর (Dense inner layer, tightly bound to centromere)।
- বাইরের স্তর থেকে একটি সূক্ষ্ম ফিলামেন্টের স্তর (Corona or Collar) নির্গত হয়।
⚙️ কাজ (Function):
- কাইনেটোকোরের সাথে ৪ থেকে ৪০টি মাইক্রোটিউবিউল (Spindle microtubules) যুক্ত হয়।
- কাইনেটোকোরের প্রোটিনগুলো "মলিকিউলার মোটর (Molecular motors)" হিসেবে কাজ করে এবং ক্রোমোজোমকে টেনে নিয়ে যায় স্পিন্ডল ফাইবার বরাবর।
- এটি Tubulin protein-কে Microtubule-এ পরিণত করতে সাহায্য করে — অর্থাৎ এটি একটি নিউক্লিয়েশন সেন্টার (Nucleation center)।
🔸 ক্রোমোসোমের ধরণ (Types of Chromosomes based on Centromere):
ধরন (Type) | বর্ণনা (Description) |
---|---|
Monocentric Chromosome | একটি মাত্র সেন্ট্রোমিয়ার থাকে (Normal type)। |
Holocentric Chromosome | সেন্ট্রোমিয়ার ছড়িয়ে থাকে পুরো ক্রোমোসোম জুড়ে (Diffuse kinetochore)। |
Acentric Chromosome | কোনও সেন্ট্রোমিয়ার থাকে না → স্থায়ী হয় না। |
Dicentric Chromosome | দুটি সেন্ট্রোমিয়ার থাকে → অস্থির ও ভঙ্গুর হয়। |
💡 জানেন কি? মানুষের Y ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান Acrocentric ধরনের, অর্থাৎ এটি প্রান্তের খুব কাছাকাছি অবস্থিত।
🔹 1. টেলোমিয়ার (Telomere):
- টেলোমিয়ার হল ক্রোমোজোমের দুই প্রান্তে অবস্থিত বিশেষ পুনরাবৃত্ত DNA সিকোয়েন্স (Repeated DNA sequences) যা একপ্রকার 'ক্যাপ' (Cap) এর মতো কাজ করে।
🌟 গুরুত্বপূর্ণ কাজ:
- ক্রোমোজোমকে নিউক্লিয়েজ (Nuclease) এবং অন্যান্য ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
- ক্রোমোজোমের প্রান্তগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাওয়াকে (Fusion) বাধা দেয়।
- নির্দিষ্ট কিছু কোষে, ক্রোমোজোমের প্রান্তগুলোর সঙ্গে নিউক্লিয়ার এনভেলপ (Nuclear envelope)-এর পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি করে।
⏳ বয়স ও কোষ বিভাজন:
- সাধারণ কোষগুলো নির্দিষ্ট সংখ্যক বার বিভাজিত হতে পারে। এর পর তারা বার্ধক্যের (Aging) লক্ষণ দেখাতে শুরু করে।
- এর কারণ হলো প্রতি কোষ বিভাজনের সাথে সাথে টেলোমিয়ার ছোট হতে থাকে।
🦠 ক্যান্সার ও টেলোমারেজ (Telomerase):
- গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক ক্যান্সার কোষে টেলোমারেজ (Telomerase) নামক একটি এনজাইম থাকে, যা টেলোমিয়ারের দৈর্ঘ্য অক্ষুণ্ন রাখে।
- সাধারণ কোষে এই টেলোমারেজ অনুপস্থিত, কিন্তু ক্যান্সার কোষে উচ্চমাত্রায় সক্রিয় থাকে।
🔬 গবেষণা তথ্য: মানব টেলোমিয়ার DNA সিকোয়েন্স "TTAGGG" পুনরাবৃত্তি করে, যা প্রায় ২,০০০-১৫,০০০ বার পুনরাবৃত্ত হতে পারে!
🔹 2. সেকেন্ডারি কনস্ট্রিকশন (Secondary Constriction):
- প্রাইমারি কনস্ট্রিকশন (Primary constriction) যেমন সেন্ট্রোমিয়ার, তেমন সেকেন্ডারি কনস্ট্রিকশন হলো এমন সংকোচন যা ক্রোমোজোমের অন্য যে কোনো স্থানে দেখা যায়।
📌 বৈশিষ্ট্য:
- এগুলো সবসময় নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকে।
- অ্যানাফেজ (Anaphase) পর্যায়ে এদের কারণে ক্রোমোজোমের দণ্ডগুলোতে কোনো বাঁক বা কোণ তৈরী হয় না, যা প্রাইমারি কনস্ট্রিকশনের ক্ষেত্রে দেখা যায় না।
🔹 3. নিউক্লিওলার অর্গানাইজার (Nucleolar Organiser):
- কিছু সেকেন্ডারি কনস্ট্রিকশন-এ থাকে এমন জিন (Genes) যা 18S এবং 28S রাইবোজোমাল RNA (rRNA) তৈরি করে।
- এই অংশগুলো নিউক্লিওলাস (Nucleolus) গঠনের জন্য দায়ী। তাই এগুলোকে বলা হয় নিউক্লিওলার অর্গানাইজার (Nucleolar organiser)।
🧬 মানবদেহে (In humans):
- ১৩, ১৪, ১৫, ২১ ও ২২ নম্বর ক্রোমোজোমে এই অর্গানাইজার থাকে।
- এরা সবাই অ্যাক্রোসেন্ট্রিক (Acrocentric) এবং তাদের একটি স্যাটেলাইট অংশও থাকে।
🔹 4. স্যাটেলাইট (Satellite):
- কিছু ক্রোমোজোমের সঙ্গে একপ্রকার গোলাকার বা গাঁটের মতো গঠন (Rounded knob-like body) দেখা যায়, যা পাতলা ক্রোমাটিন ফিলামেন্ট (Thin chromatin filament) দিয়ে মূল ক্রোমোজোমের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।
- এই গঠনটিকে বলে স্যাটেলাইট (Satellite)।
📐 বৈশিষ্ট্য:
- স্যাটেলাইটের আকার ও গঠন সর্বদা নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয় থাকে।
- যে ক্রোমোজোমে এটি থাকে তাকে বলা হয় স্যাট ক্রোমোসোম (Sat chromosome)।
✅ সারাংশ (Summary Table):
গঠন | ইংরেজি | মূল কাজ |
---|---|---|
টেলোমিয়ার | Telomere | ক্রোমোজোমের প্রান্ত রক্ষা, বিভাজনে ভূমিকা |
সেকেন্ডারি কনস্ট্রিকশন | Secondary Constriction | নির্দিষ্ট সংকোচন, নিউক্লিওলাস গঠনে ভূমিকা |
নিউক্লিওলার অর্গানাইজার | Nucleolar Organiser | rRNA জিন বহন করে, নিউক্লিওলাস গঠন করে |
স্যাটেলাইট | Satellite | স্যাট ক্রোমোজোমের নির্দিষ্ট অংশ, গোলাকার গঠন |
📚 মনে রাখার টিপস: ক্রোমোজোমের গঠন মনে রাখার সহজ উপায় "T-S-N-S" - Telomere, Secondary constriction, Nucleolar organiser, Satellite
🧬 Karyotype এবং Idiogram
🔹 1. ক্যারিওটাইপ (Karyotype):
একটি কোষের মেটাফেজ (Metaphase) পর্যায়ে থাকা সবগুলো ক্রোমোজোম (Chromosomes) এর সম্পূর্ণ সেটকে ক্যারিওটাইপ বলে।
তবে শুধু সংখ্যাই নয়, ক্রোমোজোমের বিশেষ বৈশিষ্ট্য যেমন—
- সংখ্যা (Number)
- আকার বা দৈর্ঘ্য (Size)
- সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান (Position of Centromere)
- আর্ম বা বাহুর দৈর্ঘ্য (Arm length)
- সেকেন্ডারি কনস্ট্রিকশন (Secondary constriction)
- স্যাটেলাইট (Satellite)
সব মিলেই একটি প্রজাতি-নির্দিষ্ট (Species-specific) পরিচয় তৈরি করে।
➡️ এই কারণে প্রতিটি প্রজাতির একটি বিশেষ ক্যারিওটাইপ থাকে, যেটি সেই প্রজাতিকে শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
🔹 2. আইডিওগ্রাম (Idiogram):
আইডিওগ্রাম হলো ক্যারিওটাইপের একটি চিত্ররূপ উপস্থাপনা (Diagrammatic representation)।
সাধারণত এতে ক্রোমোজোমগুলোকে আকার (Size) ও সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান (Centromere position) অনুযায়ী সাজানো হয়।
➡️ বিভিন্ন প্রজাতির আইডিওগ্রাম তুলনা করে তাদের উৎপত্তিগত সম্পর্ক (Evolutionary relationship) বোঝা যায়।
উদাহরণ:
- ইঁদুর (Mouse): সবগুলো অ্যাক্রোসেন্ট্রিক (Acrocentric) ক্রোমোজোম।
- উভচর (Amphibians): প্রায় সবগুলো মেটাসেন্ট্রিক (Metacentric) ক্রোমোজোম।
- গাছপালা (Plants): অনেক সময় টেলোমিয়ারে হেটেরোক্রোমাটিন (Heterochromatic regions) দেখা যায়।
🧬 অটোজোম (Autosome) এবং সেক্স ক্রোমোজোম (Sex Chromosome)
🔹 1. সেক্স ক্রোমোজোম (Sex Chromosomes):
এই ক্রোমোজোমগুলো জীবের লিঙ্গ নির্ধারণে (Sex determination) ভূমিকা রাখে।
সাধারণত দুই ধরনের সেক্স ক্রোমোজোম থাকে: X ও Y।
➡️ মানবদেহে (Human):
- মেয়ে (Female): ২টি X ক্রোমোজোম (XX)
- ছেলে (Male): ১টি X ও ১টি Y ক্রোমোজোম (XY)
🔹 2. অটোজোম (Autosomes):
সেক্স ক্রোমোজোম ছাড়া বাকি সব ক্রোমোজোমকে অটোজোম বলে।
এগুলো জীবের সাধারণ বৈশিষ্ট্য (somatic characteristics) যেমন গঠন, বৃদ্ধি, রঙ, উচ্চতা ইত্যাদি নির্ধারণে সাহায্য করে।
➡️ মানুষের দেহে (In humans):
- মোট ক্রোমোজোম সংখ্যা: ৪৬
- এর মধ্যে ৪৪টি অটোজোম
- ও ২টি সেক্স ক্রোমোজোম (XX বা XY)
✅ সংক্ষিপ্ত চার্ট:
টার্ম | ইংরেজি | অর্থ / ভূমিকা |
---|---|---|
ক্যারিওটাইপ | Karyotype | কোষের মেটাফেজ পর্যায়ের সব ক্রোমোজোমের গঠন ও বৈশিষ্ট্য |
আইডিওগ্রাম | Idiogram | ক্যারিওটাইপের চিত্ররূপ, আকার ও সেন্ট্রোমিয়ার অনুযায়ী সাজানো |
অটোজোম | Autosome | সেক্স ক্রোমোজোম ছাড়া বাকি সব ক্রোমোজোম |
সেক্স ক্রোমোজোম | Sex Chromosome | জীবের লিঙ্গ নির্ধারণকারী ক্রোমোজোম (X, Y) |
💡 জানার বিষয়: মানব ক্যারিওটাইপ বিশ্লেষণ করে ডাউন সিন্ড্রোম (Trisomy 21), টার্নার সিন্ড্রোম (45,X) এর মতো জিনগত ব্যাধি শনাক্ত করা যায়।
🧬 ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের রাসায়নিক প্রকৃতি (Chemical Nature of Eukaryotic Chromosomes)
🔹 ১. ডিএনএ এবং প্রোটিনের গঠন (DNA and Protein Composition):
- প্রতিটি ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোম একটি একক, লম্বা, দ্বি-সূত্রযুক্ত ডিএনএ অণু (Double-stranded linear DNA molecule) দিয়ে তৈরি, যা সম্পূর্ণ ক্রোমোজোমজুড়ে বিস্তৃত থাকে।
- ওজনের হিসেবে ক্রোমোজোমে ডিএনএ-এর চেয়ে প্রোটিন দ্বিগুণ পরিমাণে থাকে।
➡️ এই ডিএনএ ও প্রোটিনের জটিল গঠনকে বলা হয় ক্রোমাটিন (Chromatin)।
🔹 ২. সি-ভ্যালু (C-value):
- একটি প্রজাতির কোষে থাকা ডিএনএ-এর পরিমাণ নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয় এবং একেই বলা হয় সি-ভ্যালু (C-value)।
- ইউক্যারিওটিক কোষে ডিএনএ-এর পরিমাণ প্রোক্যারিওটিক কোষের চেয়ে প্রায় ১০০ গুণ বেশি।
⚠️ কিন্তু, সি-ভ্যালু ও জীবের জটিলতার মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই।
🔹 ৩. ক্রোমাটিনের ধরণ (Types of Chromatin):
🔸 (A) ইউক্রোমাটিন (Euchromatin):
- হালকা রঙে রঞ্জিত হয় (Light staining)।
- ইন্টারফেজে (Interphase) আনকোইল্ড (Uncoiled) থাকে এবং মাইটোসিসে কনডেন্সড (Condensed) হয়।
- এতে সক্রিয় জিন (Active genes) থাকে, অর্থাৎ যেগুলো প্রকাশ পাচ্ছে (Expressed)।
🔸 (B) হেটেরোক্রোমাটিন (Heterochromatin):
- গাঢ় রঙে রঞ্জিত (Dark staining) হয় এবং সবসময় কনডেন্সড অবস্থায় থাকে।
- এটি জেনেটিকালি নিষ্ক্রিয় (Genetically inactive):
- হয়তো এতে কোনো জিনই নেই,
- অথবা জিন থাকলেও তা ঐ কোষে প্রকাশ পায় না।
➡️ এটি এস-ফেজে (S-phase) ধীরে রিপ্লিকেট (Replicate) হয়।
✅ অবস্থান:
হেটেরোক্রোমাটিন সাধারণত সেন্ট্রোমিয়ার (Centromere), টেলোমিয়ার (Telomere) ও অন্যান্য নির্দিষ্ট জায়গায় থাকে।
🔹 ৪. হেটেরোক্রোমাটিনের দুই ধরনের শ্রেণি:
🔸 (A) কনস্টিটিউটিভ হেটেরোক্রোমাটিন (Constitutive Heterochromatin):
- সব কোষে সবসময় স্থায়ীভাবে কনডেন্সড ও নিষ্ক্রিয়।
- সাধারণত স্যাটেলাইট ডিএনএ (Satellite DNA) থাকে এতে, যেটি গঠনগত (Structural) ভূমিকা রাখে।
- সেন্ট্রোমিয়ার ও টেলোমিয়ারে এই ধরনের হেটেরোক্রোমাটিন থাকে।
🔸 (B) ফ্যাকালটেটিভ হেটেরোক্রোমাটিন (Facultative Heterochromatin):
- সম্ভাব্য হেটেরোক্রোমাটিন, অর্থাৎ কখনো সক্রিয় থাকে আবার কখনো নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
- Barr body (মেয়েদের কোষে নিষ্ক্রিয় X ক্রোমোজোম) একটি উদাহরণ।
🔹 ৫. প্রোটিন উপাদান (Proteins in Chromatin):
🔸 (A) হিস্টোন (Histone) প্রোটিন:
- ছোট, বেসিক প্রকৃতির প্রোটিন (Small basic proteins), যেগুলোতে আর্জিনিন (Arginine) ও লাইসিন (Lysine) থাকে।
- এরা ধনাত্মকভাবে চার্জযুক্ত (Positively charged) হয় এবং ঋণাত্মক ডিএনএ-এর সঙ্গে যুক্ত হয়।
- পাঁচটি প্রধান হিস্টোন:
- H1, H2A, H2B, H3, H4
➡️ H2A, H2B, H3, H4 খুবই সংরক্ষিত (Conserved) — বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে প্রায় একই রকম।
🔸 উদাহরণ:
- গরু ও মটরের মধ্যে H4-তে মাত্র ২টি অ্যামিনো অ্যাসিডের পার্থক্য,
- সমুদ্র সী আরচিন ও গরুর মধ্যে H3-তে মাত্র ১টি পার্থক্য।
H1 প্রজাতিভেদে ভিন্ন, এবং টিস্যু স্পেসিফিক (Tissue-specific) রূপে পাওয়া যায়। এটি ২০০ বেস পেয়ার ডিএনএ-তে একবার থাকে এবং উচ্চতর স্তরের ক্রোমাটিন গঠন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
🔸 (B) নন-হিস্টোন (Non-histone) প্রোটিন:
- সাধারণত অ্যাসিডিক প্রকৃতির (Acidic) এবং হিস্টোনের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
- এদের ভূমিকা:
- রেপ্লিকেশন (Replication)
- ট্রান্সক্রিপশন (Transcription)
- জিনের প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ (Gene regulation)
➡️ High Mobility Group (HMG) proteins হলো শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
✅ নন-হিস্টোন প্রোটিন:
- প্রজাতিভেদে ভিন্ন
- একই জীবের বিভিন্ন কোষে ভিন্ন ভিন্ন
- সময় অনুযায়ীও পরিবর্তন হয়
🧾 সারসংক্ষেপ টেবিল:
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
DNA | দ্বি-সূত্রযুক্ত, একটানা এবং লম্বা |
C-value | একটি প্রজাতির নির্দিষ্ট ডিএনএ পরিমাণ |
Chromatin | DNA + প্রোটিন জটিল গঠন |
Euchromatin | হালকা রঞ্জিত, সক্রিয় জিন |
Heterochromatin | গাঢ় রঞ্জিত, নিষ্ক্রিয়, ধীরে রিপ্লিকেট |
Constitutive heterochromatin | সবসময় নিষ্ক্রিয় (যেমন: centromere) |
Facultative heterochromatin | সাময়িক নিষ্ক্রিয় (যেমন: Barr body) |
Histones | H1, H2A, H2B, H3, H4; ডিএনএ গঠনে ভূমিকা |
Non-histones | রিপ্লিকেশন, ট্রান্সক্রিপশন ইত্যাদিতে ভূমিকা |
🔬 গবেষণা তথ্য: মানব জিনোমের প্রায় ৫০% অংশই বিভিন্ন ধরনের রিপিটিটিভ সিকোয়েন্স (Repetitive sequences) দ্বারা গঠিত, যার বেশিরভাগই হেটেরোক্রোমাটিন অঞ্চলে অবস্থিত।