Kingdom Fungi (ফানজাই রাজ্য)

 

ছত্রাক হলো হেটেরোট্রফিক জীব, যার অর্থ পুষ্টি বা বৃদ্ধির জন্য তাদের জৈব যৌগের প্রয়োজন।

ছত্রাক হলো স্পোর-বহনকারী ইউক্যারিওট।

ছত্রাক এককোষী বা বহুকোষী হতে পারে।

ছত্রাকের মধ্যে মোল্ড এবং ঈস্ট অন্তর্ভুক্ত।

  • মোল্ড- তন্তুময়, বহুকোষী।

  • ঈস্ট- এককোষী।

ছত্রাক অধ্যয়নকে সাধারণত মাইকোলজি বলা হয়।  


বৈশিষ্ট্যসমূহ :- 

এদের মধ্যে এককোশী ফাঙ্গি যেমন ইস্ট থেকে শুরু করে বহুকোশী জটিল প্রকৃতির ফাঙ্গি যেমন মাশরুম পর্যন্ত দেখা যায়।  

এরা বায়ু, জল, মাটি, প্রাণী ও উদ্ভিদের উপর সর্বত্র বিস্তৃত (সর্বব্যাপী)।

উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশে এদের প্রাচুর্য বেশি।  


General Characteristics of Fungi (ছত্রাকের সাধারণ বৈশিষ্ট্য)  


বিস্তৃতি (Distribution)

- ছত্রাক সর্বব্যাপী (Cosmopolitan) অর্থাৎ এরা বায়ু, জল, মাটি, প্রাণী ও উদ্ভিদের শরীরে পাওয়া যায়।  

- এরা প্রধানত স্থলজ (Terrestrial), তবে কিছু জলজও রয়েছে।  

পরিবেশের পছন্দ (Preferred Habitat) 

- এরা উষ্ণ ও আর্দ্র (Warm & Humid) পরিবেশে ভালো জন্মায়।  

- বিভিন্ন উপাদানের উপর নির্ভর করে বিশেষ ধরনের ছত্রাক গজায়:  

পুষ্টি (Nutrition)

ফাঙ্গাই হেটেরোট্রফিক (Heterotrophic) অর্থাৎ তারা নিজেরা খাদ্য তৈরি করতে পারে না। তাদের পুষ্টি তিনভাবে হতে পারে:

স্যাপ্রোফাইটিক (Saprophytic): মৃত জৈব পদার্থ থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে।

পরজীবী (Parasitic): অন্য জীবের দেহ থেকে পুষ্টি শোষণ করে।

মিথোজীবী (Symbiont): কিছু ছত্রাক সহাবস্থান (Symbiotic) করে, যেমন মাইকোরাইজা (Mycorrhiza) ও লাইকেন (Lichen)।  

Body Structure (দেহের গঠন)

দেহ হ্যাপ্লয়েড (Haploid) অর্থাৎ এদের কোশে ক্রোমোজোমের এক সেট থাকে (n)।

থ্যালয়েড (Thalloid) অর্থাৎ এদের দেহ মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত নয় (অন্যান্য উদ্ভিদের মতো সুগঠিত নয়)।


হাইফার গঠন (Structure of Hyphae)

ছত্রাকের দেহ হাইফা (Hypha) নামক সুতার মতো অংশ নিয়ে গঠিত, যা একত্রে মাইসেলিয়াম (Mycelium) গঠন করে।

হাইফা প্রধানত দুই ধরনের:

১. অ্যাসেপ্টেট হাইফা (Aseptate Hyphae) : অনুপ্রস্থ বিভাজন (Septum) থাকে না, তাই একাধিক নিউক্লিয়াসযুক্ত (Multinucleate)। একে সিনোসাইটিক হাইফা (Coenocytic Hypha) বলা হয়। উদাহরণ: জাইগোমাইসিটিস (যেমন- রাইজোপাস)।


২. সেপ্টেট হাইফা (Septate Hyphae) : অনুপ্রস্থ বিভাজন (Septum) দ্বারা বিভক্ত এবং সাধারণত একটি নিউক্লিয়াস থাকে। উদাহরণ: অ্যাসকোমাইসিটিস (যেমন- ইস্ট, পেনিসিলিয়াম)।

হাইফার কোষ প্রাচীর (Cell Wall of Hyphae)

এটি কাইটিন (Chitin) বা ফাঙ্গাল সেলুলোজ (Fungal Cellulose) দ্বারা গঠিত, যা একটি নাইট্রোজেনযুক্ত পলিস্যাকারাইড এবং মূলত অ্যাসিটাইলগ্লুকোসামিন (Acetylglucosamine) দিয়ে তৈরি।

কিছু ফাঙ্গাসে (যেমন Phytophthora, Pythium এবং অন্যান্য Oomycetes) কোষ প্রাচীর সেলুলোজ দিয়ে গঠিত।

সংরক্ষিত খাদ্য (Reserve Food Material)

তেল (Oil) এবং গ্লাইকোজেন (Glycogen) আকারে জমা থাকে।

গলগি বডি (Golgi Bodies)

কোষে ইউনিসিস্টারনাল গলগি বডি (Unicisternal Golgi Bodies) থাকে।

কোশ বিভাজন :

সোমাটিক কোশ মাইটোসিস ক্যারিওকাইনেসিস প্রকারের (Karyokinesis type) অর্থাৎ নিউক্লিয়াসের বিভাজন ঘটে।

জীবনচক্রের পর্যায় (Life Cycle Phases)

ফাঙ্গাই-এর অযৌন ও যৌন জীবনচক্র

 ১. অযৌন প্রজনন (Asexual Reproduction)

ফাঙ্গাই প্রধানত রেণু (Spores) উৎপন্নের মাধ্যমে অযৌন প্রজনন করে। বিভিন্ন ধরনের অযৌন রেণু দেখা যায়:

(ক) Zoospore:

জলজ ফাঙ্গাই এই ধরণের স্পোর তৈরি করে। জুস্পোরগুলি একক ফ্ল্যাজেলাযুক্ত হতে পারে, যেমন স্যাপ্রোলেগনিয়া, পাইথিয়াম। জুস্পোরাঞ্জিয়ার মধ্যে গঠিত নগ্ন একক নিউক্লিয়াসযুক্ত গঠন। এগুলি অঙ্কুরিত হয়ে নতুন মাইসেলিয়াম তৈরি করে। দ্বি-ফ্ল্যাজেলাযুক্ত জুওস্পোর দুই প্রকারের হয় (যেমন, স্যাপ্রোলেগনিয়া) নাশপাতি আকৃতির বা পাইরিফর্ম যার সামনের প্রান্তে ২টি ফ্ল্যাজেলা থাকে (প্রাথমিক জুওস্পোর) এবং কিডনি আকৃতির বা শিমের আকৃতির, যার পাশে দুটি ফ্ল্যাজেলা ঢোকানো থাকে (দ্বিতীয় জুওস্পোর)। দুই ধরনের জুওস্পোর থাকার এই ঘটনাটিকে ডাইপ্ল্যানেটিজম বলে। 

(খ) স্পোরাঞ্জিয়োস্পোর : এগুলি হল পাতলা প্রাচীরযুক্ত অচল স্পোর যা একটি থলির মতো গঠনে উৎপন্ন হয়, যাকে স্পোরাঞ্জিয়া (sporangia) বা স্পোরাঞ্জিয়াম (sporangium) বলা হয়। স্পোরাঞ্জিয়ামের ভিতরে প্রচুর সংখ্যক হ্যাপ্লয়েড (n) রেণু থাকে। স্পোরাঞ্জিয়ামের প্রাচীর ফেটে গেলে এই রেণুগুলি মুক্ত হয়ে যায়। (যেমন- রাইজোপাস)।

(গ) কনিডিয়া (Conidia): কনিডিয়া হল অচল, পাতলা প্রাচীরযুক্ত বহির্জাত স্পোর যা কনিডিওফোর (বায়বীয় হাইফার ডগা বা পাশ্ববর্তী অংশ) থেকে উৎপন্ন হয়। এগুলি কোনো স্পোরাঞ্জিয়াম বা থলির মতো গঠনের ভিতরে উৎপন্ন হয় না। এগুলি মুক্তভাবে কনিডিওফোরের ডগা বা পাশে গঠিত হয় ।(যেমন- অ্যাস্পারজিলাস, পেনিসিলিয়াম)।

(ঘ ) ওইডিয়া (Oidia): হাইফা ভেঙে ছোট কোশ তৈরি করে (কিছু ইস্টে দেখা যায়)। অচল পাতলা প্রাচীরযুক্ত স্পোর যা মাধ্যমে চিনি সমৃদ্ধ পরিস্থিতিতে বিকাশ লাভ করে। তাদের মুকুলিত অবস্থাকে টোরুলা পর্যায় বলা হয়।

(ঙ) ক্ল্যামাইডোস্পোর (Chlamydospores): এগুলি সাধারণত প্রতিকূল পরিবেশে গঠিত হয়। এগুলি মোটা প্রাচীরযুক্ত এককোশী রেণু যা প্রতিকূল অবস্থার বিরুদ্ধে উচ্চ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। এগুলি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে এবং অনুকূল পরিবেশ ফিরে এলে আবার অঙ্কুরিত হয়ে নতুন ফাঙ্গাস তৈরি করে।

 ২. অঙ্গজ জনন পদ্ধতি:

বিভাজন (Binary Fission): বাইনারি ফিশনে একটি মূল কোশ (Parent Cell) সমান আকারের দুটি অংশে বিভক্ত হয়, যার প্রতিটি একটি নতুন স্বতন্ত্র জীব গঠন করে। ইস্টের মতো কিছু ফাঙ্গাই কোশ এই বিভাজনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে।

মুকুলায়ন (Budding): মূল জীবদেহের (Parent Organism) একটি ছোট অংশ থেকে নতুন মুকুল (Bud) সৃষ্টি হয়। এই মুকুল (Bud) ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে পরিপক্ব হয়। শেষে এটি মূল দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি নতুন স্বাধীন জীব গঠন করে(যেমন- স্যাকারোমাইসেস)।

৩. যৌন প্রজনন (Sexual Reproduction)

ফাঙ্গাই তিন ধরনের যৌন রেণু উৎপন্ন করে:

    (ক) উস্পোর (Oospores)

    (খ)  অ্যাসকোস্পোর (Ascospores)

    (গ) বেসিডিওস্পোর (Basidiospores)

ফ্রুটিং বডি (Fruiting Bodies) :

এই রেণুগুলি বিশেষ গঠনে উৎপন্ন হয় যাকে ফ্রুটিং বডি বলে। প্রধান দুই ধরনের ফ্রুটিং বডি:

• অ্যাসকোকার্প (Ascocarp) - এতে অ্যাসাই (asci) থাকে

• বেসিডিওকার্প (Basidiocarp) - এতে বেসিডিয়া (basidia) থাকে

অ্যাসকোস্পোর (Ascospores)

 • অচল (non-motile) প্রকৃতির বীজাণু

 • বিশেষ থলির মতো গঠন অ্যাসকাস (ascus)-এর ভিতরে উৎপন্ন হয়

 • প্রতিটি অ্যাসকাসে সাধারণত ৮টি অ্যাসকোস্পোর থাকে

 • উদাহরণ: ইস্ট, মোরেল মাশরুম

বেসিডিওস্পোর (Basidiospores)

 • এগুলিও অচল (non-motile) প্রকৃতির

 • বাহ্যিকভাবে (exogenously) গঠিত হয়

 • গদির মতো গঠন বেসিডিয়াম (basidium)-এর উপর ছোট ছোট বৃদ্ধি থেকে সৃষ্টি হয়

 • প্রতিটি বেসিডিয়ামে সাধারণত ৪টি বেসিডিওস্পোর থাকে

 • উদাহরণ: সাধারণ মাশরুম, puffballs

যৌণ জনন পদ্ধতি :- 

(ক) প্লাজমোগ্যামি :-

প্লাজমোগ্যামি হলো দুটি হ্যাপ্লয়েড (n) হাইফা বা গ্যামেটের প্রোটোপ্লাজমের মিলন প্রক্রিয়া, যেখানে সাইটোপ্লাজম একীভূত হয় কিন্তু নিউক্লিয়াসগুলো তখনও আলাদা থাকে। এটি যৌন প্রজননের প্রথম ধাপ।

প্লাজমোগ্যামির পদ্ধতিসমূহ -

a. প্ল্যানোগ্যামেটিক কপুলেশন / গ্যামেটিক ফিউশন : গতিশীল গ্যামেটের (planogametes) মিলন ঘটে। উদাহরণ: অ্যালোমাইসিস (Allomyces)

b. গ্যামেট্যানজিয়াল কন্টাক্ট : গ্যামেট্যানজিয়া (গ্যামেট ধারণকারী অঙ্গ) একে অপরের সংস্পর্শে আসে কিন্তু মিলিত হয় না। উদাহরণ: পাইথিয়াম (Pythium), অ্যালবিউগো (Albugo)

c. গ্যামেট্যানজিয়াল কপুলেশন : পুরো গ্যামেট্যানজিয়া মিলিত হয়ে একটি সাধারণ কাঠামো গঠন করে। উদাহরণ: মিউকর (Mucor), রাইজোপাস (Rhizopus)

d. স্পারম্যাটাইজেশন : বিশেষ গ্যামেট (স্পারম্যাটিয়া) স্ত্রী গ্যামেট্যানজিয়ামের সাথে মিলিত হয়। উদাহরণ: পাক্সিনিয়া (Puccinia)

e. সোমাটোগ্যামি : সাধারণ হাইফা সরাসরি মিলিত হয় (গ্যামেট্যানজিয়া ছাড়াই)। উদাহরণ: অ্যাগারিকাস (Agaricus বা মাশরুম) 

(খ) ক্যারিওগ্যামি (Karyogamy)

দুটি নিউক্লিয়াসের মিলনকে ক্যারিওগ্যামি বলে

কিছু ফাঙ্গাইতে (যেমন অ্যাগারিকাস, অ্যাস্পারজিলাস) প্লাজমোগ্যামির পর ডাইকারিয়োটিক দশা (n + n) দেখা যায়

এই অবস্থায় একটি কোষে ২টি নিউক্লিয়াস থাকে

একে ডাইকারিয়ন বলে

এই পর্যায়কে ডাইকারিওফেজ বলা হয়

(গ) মিয়োসিস (Meiosis) :

ডিপ্লয়েড (2n) জাইগোট মিয়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে হ্যাপ্লয়েড (n) রেণু তৈরি করে

এই রেণু ফ্রুটিং বডির ভিতরে গঠিত হয়

অ্যাসকোমাইসিটিসে: অ্যাসকাসে অ্যাসকোস্পোর

বেসিডিওমাইসিটিসে: বেসিডিয়ামে বেসিডিওস্পোর

এটি জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টির মূল প্রক্রিয়া

জীবনচক্র সংক্ষেপে:

প্লাজমোগ্যামি (n + n) → ডাইকারিওফেজ → ক্যারিওগ্যামি (2n) → মিয়োসিস (n) 


Classification of Fungi :-

1. Class : Phycomycetes

বাসস্থান ও প্রকৃতি

  • জলজ পরিবেশে (Aquatic habitats)

  • আর্দ্র ও স্যাঁতসেঁতে স্থানে পচা কাঠে (Decaying wood in moist places)

  • গাছের বাধ্যতামূলক পরজীবী (Obligate parasites on plants) হিসেবে দেখা যায়

মাইসিলিয়ামের গঠন

  • অসেপ্টেট (অখণ্ডিত, Septa বা বিভাজক প্রাচীরবিহীন)

  • সিনোসাইটিক (Coenocytic - একাধিক নিউক্লিয়াসযুক্ত)

অযৌন প্রজনন

  • জুস্পোর (Zoospores - গতিশীল) দ্বারা

  • অপ্ল্যানোস্পোর (Aplanospores - অচল) দ্বারা

এই রেণুগুলি স্পোরাঞ্জিয়ামের ভিতরে (Endogenously) উৎপন্ন হয়

যৌন প্রজনন

  • দুটি গ্যামেটের মিলনে জাইগোস্পোর (Zygospore) গঠিত হয়

  • গ্যামেটগুলি আইসোগ্যামাস (Isogamous - গ্যামেট আকারে ও আকৃতিতে একই), অ্যানাইসোগ্যামাস বা উগ্যামাস (Anisogamous/Oogamous - গ্যামেট ভিন্ন আকৃতির)

গ্রুপ 1 : উমাইসিটিস / অ্যালগাল ফাঙ্গাই (Oomycetes - The Algal Fungi)

কোষ প্রাচীরের গঠন

  • সেলুলোজ (Cellulose) এবং অন্যান্য গ্লুকান (Glucans) দ্বারা গঠিত

  • এটি ফাঙ্গাই সাধারণত কাইটিনযুক্ত প্রাচীরের পরিবর্তে সেলুলোজ ধারণ করে, যা এদেরকে শৈবালের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করে

মাইসিলিয়ামের বৈশিষ্ট্য

  • সিনোসাইটিক (Coenocytic - অসেপ্টেট ও বহুনিউক্লিয়াসযুক্ত)

অযৌন প্রজনন

  • স্পোরাঞ্জিয়া (Sporangia) নামক থলিতে রেণু উৎপন্ন হয়

  • জলজ প্রজাতিতে স্পোরাঞ্জিয়া থেকে জুস্পোর (Zoospores) সৃষ্টি হয়

  • জুস্পোরের দুটি পাশ্ববর্তী ফ্ল্যাজেলা (Laterally inserted flagella) থাকে

যৌন প্রজনন

 • প্ল্যানোগ্যামেটিক ফিউশন (Planogametic fusion - গতিশীল গ্যামেটের মিলন)

  • গ্যামেট্যানজিয়াল কন্টাক্ট (Gametangial contact - গ্যামেটধারী অঙ্গের সংস্পর্শ)

  • যৌন প্রজননের ফলে উস্পোর (Oospore) গঠিত হয়

  • মিয়োসিস (Meiosis) উস্পোরের মধ্যে সংঘটিত হয়

গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ

  • ফাইটোফথোরা ইনফেস্ট্যানস (Phytophthora infestans - আলুর লেট ব্লাইট রোগ সৃষ্টিকারী)

 • পাইথিয়াম (Pythium - চারা ধ্বসা রোগের কারণ)

  • অ্যালবিউগো (Albugo - উদ্ভিদ পরজীবী) 


গ্রুপ 2 : জাইগোমাইসিটিস /কনজুগেশন ফাঙ্গাই (Zygomycetes - The Conjugation Fungi)

• এটি স্থলজ ছত্রাকের একটি শ্রেণী যা মূলত মৃতজীবী এবং কদাচিৎ পরজীবী।

 • হাইফার প্রাচীরে কাইটিন বা ছত্রাকের সেলুলোজ থাকে।

  • মাইসেলিয়াম সিনোসাইটিক (বহু নিউক্লিয়াসযুক্ত, অ্যাসেপ্টেট) যা উমাইসিটিসেও দেখা যায়।

  • যৌন প্রজনন গ্যামেট্যাঞ্জিয়াল কপুলেশন বা কনজুগেশনের মাধ্যমে ঘটে।

  • গ্যামেটগুলি সাধারণত বহু নিউক্লিয়াসযুক্ত এবং এদের সিনোগ্যামেট (coenogametes) বলা হয়।

  • যৌন প্রজননের ফলে জাইগোস্পোর নামক একটি সুপ্ত দ্বিস্তরী স্পোর তৈরি হয়। জাইগোস্পোরের উপস্থিতির কারণে, এই ছত্রাক গোষ্ঠীকে জাইগোমাইসিটিস বলা হয়।


গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ

  • মিউকর (Mucor)

  • রাইজোপাস (Rhizopus) – "রুটির ছাতা" (Bread mould)

  • পিলোবোলাস (Pilobolus) – গোবর-বাসী ফাঙ্গাই 


2. Class : Ascomycetes (The Sac Fungi)

General Characteristics

১. মাইসেলিয়ামের গঠন (Mycelium Structure)

• সেপ্টেট হাইফা (Septate Hyphae) দ্বারা গঠিত, অর্থাৎ হাইফাগুলো অনুপ্রস্থ বিভাজন (Septa) দ্বারা পৃথকীকৃত।

• সেপ্টার কেন্দ্রে ছিদ্র (Septal Pores) থাকে, যা পার্শ্ববর্তী কোষগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ও পদার্থ চলাচলে সাহায্য করে।

২. সংগঠন (Organization)

• প্রধানত বহুকোষী (Multicellular), যেমন— পেনিসিলিয়াম (Penicillium), অ্যাস্পারজিলাস (Aspergillus)।

• কিছু এককোষী (Unicellular), যেমন— ইস্ট (Saccharomyces)।

৩. পুষ্টি (Nutrition)

• স্যাপ্রোফাইটিক (Saprophytic) – মৃতজৈব পদার্থ পচনকারী।

• পরজীবী (Parasitic) – উদ্ভিদ ও প্রাণীতে রোগ সৃষ্টিকারী (যেমন— এরগট ফাঙ্গাস)।

• কপ্রোফিলাস (Coprophilous) – গোবরে জন্মায় (যেমন— Pilobolus)।

৪. চলন (Motility)

• এদের জীবনচক্রে কোনো চলনক্ষম (Motile) অংশ নেই (অর্থাৎ ফ্ল্যাজেলা বা সিলিয়া থাকে না)।

৫. অযৌন প্রজনন (Asexual Reproduction)

• কনিডিয়া (Conidia) গঠনের মাধ্যমে অযৌন প্রজনন ঘটে।

• কনিডিওফোর (Conidiophore) নামক বিশেষায়িত হাইফা থেকে কনিডিয়া উৎপন্ন হয়।

৬. যৌন প্রজনন (Sexual Reproduction)

• অ্যাসকোস্পোর (Ascospores) নামক অন্তঃগঠিত যৌন বীজগুটি উৎপন্ন করে

• অ্যাসকোস্পোর গঠিত হয় অ্যাসকাস (ascus) নামক থলির ভিতরে

• প্রতিটি অ্যাসকাসে সাধারণত 4 থেকে 8 টি অ্যাসকোস্পোর থাকে

৭. ফলদেহ গঠন (Ascocarp Formation)

• অ্যাসকাসগুলো বিভিন্ন ধরনের অ্যাসকোকার্প (ascocarp) নামক ফলদেহে সজ্জিত থাকে:

  > ক্লেভিসেপস (Claviceps) - এরগট রোগ সৃষ্টিকারী

  > নিউরোস্পোরা (Neurospora) - জিনতত্ত্ব গবেষণায় ব্যবহৃত

  > অ্যাস্পারজিলাস (Aspergillus) - ঔষধ ও শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ

৮. অর্থনৈতিক গুরুত্ব (Economic Importance)

• নিউরোস্পোরা জৈবরাসায়নিক ও জিনতাত্ত্বিক গবেষণায় ব্যাপক ব্যবহৃত

• মোরেল (Morels) ও ট্রাফেল (Truffles) নামক খাদ্যোপযোগী ছত্রাক বিলাসদ্রব্য হিসেবে বিবেচিত

• কিছু প্রজাতি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ (পেনিসিলিন) ও খাদ্য (ইস্ট) উৎপাদনে ব্যবহৃত

∴ অ্যাসকোমাইসিটিস বৈজ্ঞানিক গবেষণা, চিকিৎসা ও খাদ্য শিল্পে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উদাহরণ:

পেনিসিলিয়াম (Penicillium) – ব্রাশের মতো কনিডিওফোর।

অ্যাস্পারজিলাস (Aspergillus) – ফ্লাস্কের মতো কনিডিওফোর।

১. ক্ষতিকর অ্যাসকোমাইসিটিস (Harmful Ascomycetes)

এই শ্রেণির কিছু সদস্য মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর:

(ক) ক্ল্যাভিসেপস পারপুরিয়া (Claviceps purpurea)

  • রাই গমের এরগট রোগ সৃষ্টি করে।

  • বাজরার (bajra) এরগট রোগ সৃষ্টিকারী – Claviceps microcephala।

 সংক্রমিত শস্য খাওয়ার ফলাফল (Ergotism):

  • ছত্রাকটি এরগোটিন (Ergotine) নামক একটি ক্ষতিকর অ্যালকালয়েড উৎপন্ন করে।

  • গর্ভপাত (Abortion) ঘটাতে পারে (অজান্তে খেলে)।

  • ঐতিহাসিকভাবে, এরগোটিন প্রসব বেদনা বৃদ্ধির ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

২. উপকারী অ্যাসকোমাইসিটিস (Useful Ascomycetes)

(ক) মোরেল মাশরুম (Morels – Morchella)

বিশেষ বৈশিষ্ট্য : গুচ্ছি (Guchhi) নামে পরিচিত, এটি একটি খাদ্যোপযোগী অ্যাসকোকার্প। ফলদেহ  স্পঞ্জের মতো নরম, শঙ্কুযুক্ত টুপি (Pileus) ও ডাঁটা (Stipe) থাকে।

উদাহরণ: Morchella esculenta (সাধারণ গুচ্ছি), Morchella deliciosa (স্বাদু গুচ্ছি)


মূল্যবান খাদ্য: বিলাসবহুল খাবার হিসেবে বিবেচিত।

(খ) নিউরোস্পোরা ক্রাসা (Neurospora crassa)

সাধারণ নাম: পিঙ্ক ব্রেড মোল্ড (গোলাপি রুটিছাতা)

বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব:

  • জিনতত্ত্ব ও জৈবরসায়নের গবেষণায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়

  • "উদ্ভিদ জগতের ড্রোসোফিলা" (Drosophila of the Plant Kingdom) নামে পরিচিত

  • এর হ্যাপ্লয়েড প্রকৃতি ও দ্রুত জীবনচক্র গবেষণার জন্য আদর্শ

(গ) পেনিসিলিয়াম ক্রাইসোজেনাম (Penicillium chrysogenum)

অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন:

  • পেনিসিলিন (বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক অ্যান্টিবায়োটিক) উৎপন্ন করে

  • মূলত পেনিসিলিয়াম নোটাটাম (P. notatum) থেকে আবিষ্কৃত হয়েছিল

খাদ্য শিল্পে ব্যবহার:

 • পেনিসিলিয়াম রকফোর্টি (P. roqueforti): রকফোর্ট পনির তৈরি

 • পেনিসিলিয়াম ক্যামেম্বার্টি (P. camemberti): ক্যামেম্বার্ট পনির তৈরি 

(ঘ) ব্রিউইং শিল্পে ইস্টের ব্যবহার (Brewing Industry & Yeasts)

প্রক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত বিবরণ : অ্যানেরোবিক অবস্থায় (অক্সিজেন-বিহীন পরিবেশে), ইস্ট (খামির) চিনিযুক্ত দ্রবণকে অ্যালকোহল ও কার্বন ডাই-অক্সাইডে রূপান্তরিত করে। এই প্রক্রিয়াকে অ্যালকোহলিক ফার্মেন্টেশন (Alcoholic Fermentation) বলা হয়।

প্রস্তুত দ্রব্য: বিয়ার (Beer), ওয়াইন (Wine), সিডার (Cider – আপেল/নাশপাতির ফার্মেন্টেড পানীয়), টোডি (Toddy – তাল/খেজুর রসের ফার্মেন্টেড পানীয়) 

ব্যবহৃত ইস্টের প্রজাতি : স্যাকারোমাইসিস সেরেভিসিয়াই (Saccharomyces cerevisiae) ["বিয়ার ইস্ট" বা "বেকার্স ইস্ট"], স্যাকারোমাইসিস এলিপসোইডিয়াস (S. ellipsoideus)  [ আঙুর/ফলের রস থেকে ওয়াইন তৈরি]  


Class 3 :- ব্যাসিডিওমাইসিটিস : ক্লাব ছত্রাক (মাশরুম)

• এরা সবচেয়ে উন্নত এবং বহুল পরিচিত ছত্রাক। এদের ফলদানকারী অঙ্গ প্রায়শই বড় এবং সহজে চোখে পড়ার মতো হয়, যেমন - মাশরুম, ব্যাঙের ছাতা (toadstool), পাফ বল, ব্র্যাকেট ছত্রাক ইত্যাদি।

• ব্যাসিডিওমাইসিটিস কাঠ পচনে অত্যন্ত দক্ষ। গ্যানোডার্মা প্রজাতি এমনকি দাঁড়িয়ে থাকা গাছের কাঠও পচিয়ে ফেলতে পারে।

• সাধারণত অযৌন রেণু দেখা যায় না, তবে খণ্ডীভবনের মাধ্যমে অঙ্গজ প্রজনন প্রচলিত।

• এদের যৌন অঙ্গ অনুপস্থিত, কিন্তু দুটি ভিন্ন স্ট্রেন বা জিনোটাইপের ভেজিটেটিভ বা সোমাটিক কোশ এর র মিলনের মাধ্যমে প্লাজমোগ্যামি ঘটে।

• এর ফলে সৃষ্ট গঠনটি ডাইকারিওটিক হয় যা অবশেষে ব্যাসিডিয়ামের জন্ম দেয়।

• ব্যাসিডিয়ামের মধ্যে ক্যারিওগ্যামি এবং মিয়োসিস ঘটে এবং চারটি ব্যাসিডিওস্পোর উৎপন্ন হয়।

• ব্যাসিডিওস্পোরগুলি বহির্জাতভাবে ব্যাসিডিয়ামের (basidia) উপর উৎপন্ন হয়।

• ব্যাসিডিয়াগুলি ফলদানকারী অঙ্গ যাকে ব্যাসিডিওকার্প বলে, তার মধ্যে সজ্জিত থাকে।

• কিছু সাধারণ সদস্য হল অ্যাগারিকাস (মাশরুম), ইউস্টিলাগো (স্মাট) এবং পাক্সিনিয়া (রাস্ট ছত্রাক)। 

ব্যাসিডিওমাইসিটিস এর উদাহরণ :- 

১. স্মাট (Smuts)

এরা পুরু প্রাচীরযুক্ত, কালো রঙের স্পোর তৈরি করে, যা স্মাট স্পোর নামে পরিচিত।

স্মাট মূলত দুই প্রকার: আবৃত (covered) এবং উন্মুক্ত (loose)।

আবৃত স্মাট (Covered Smut): এই প্রকার স্মাটে, স্পোরের স্তূপ সোরাস নামক একটি ঝিল্লিযুক্ত আবরণের মধ্যে আবদ্ধ থাকে। উদাহরণস্বরূপ, Ustilago hordei (বার্লির আবৃত স্মাট), Ustilago maydis (ভুট্টার স্মাট)। এখানে স্পোরগুলি একটি আবরণের মধ্যে সুরক্ষিত থাকে।

উন্মুক্ত স্মাট (Loose Smut): এই প্রকার স্মাটে, স্পোরগুলি যখন পোষকের সাথে সংযুক্ত থাকে তখনই উন্মুক্ত অবস্থায় থাকে। উদাহরণস্বরূপ, Ustilago nuda tritici (গমের উন্মুক্ত স্মাট), U. avenae (ওটের উন্মুক্ত স্মাট)। এখানে স্পোরগুলি সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।

২. ব্যাঙের ছাতা (Toadstools)

ব্যাঙের ছাতা হল বিষাক্ত মাশরুম যা সাধারণত সাদা স্পোর ধারণ করে।

অ্যামানিটা সিজারিয়া (Amanita caesarea) রোমান সম্রাট সিজারকে বিষ প্রয়োগের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। (যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে এটি বিষাক্ত কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এর উল্লেখ গুরুত্বপূর্ণ।)

অন্যান্য বিষাক্ত ব্যাঙের ছাতাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

অ্যামানিটা ফ্যালোয়েডিস (Amanita phalloides - Death cap): এটি অত্যন্ত বিষাক্ত এবং এর বিষক্রিয়ায় মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

অ্যামানিটা মাস্কারিয়া (A. muscaria - Fly agaric): এটি উজ্জ্বল রঙের এবং এতে বিষাক্ত উপাদান রয়েছে যা স্নায়বিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

জিরোমিট্রা এস্কুলেন্টা (Gyromitra esculenta): এটিতে তাপ সংবেদনশীল কার্সিনোজেনিক টক্সিন থাকে 

৩. মাশরুম (Mushrooms)

মাশরুম হল ভক্ষণযোগ্য অথবা অভক্ষণযোগ্য অ্যাগারিক্যালিস বর্গের ছত্রাক, যাদের ছাতার মতো ব্যাসিডিওকার্প (ফলদানকারী অঙ্গ) থাকে।

সাধারণ ভক্ষণযোগ্য মাশরুমের কিছু উদাহরণ হল:

 • অ্যাগারিকাস ক্যাম্পেসট্রিস (Agaricus campestris): এটি সাধারণভাবে ক্ষেতের মাশরুম নামে পরিচিত।

 • অ্যাগারিকাস বাইস্পোরাস (Agaricus bisporus): এটি বহুল পরিচিত এবং বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা মাশরুম, যা বোতাম মাশরুম বা সাদা মাশরুম নামেও পরিচিত।

 • ভোলভারিয়েলা ভোলভাসিয়া (Volvariella volvacea): এটি ধানের খড়ের মাশরুম নামে পরিচিত এবং গ্রীষ্মকালীন অঞ্চলে চাষ করা হয়।

 • প্লুরোটাস অস্ট্রিয়েটাস (Pleurotus ostreatus): এটি ঝিনুক মাশরুম নামে পরিচিত এবং এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণের জন্য সমাদৃত।

৪. রাস্ট (Rusts)

রাস্ট ছত্রাকগুলি স্পোর ধারণকারী মরিচা-ধূসর রঙের ফোস্কা (pustules) তৈরির মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়।

কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গমের রাস্ট রোগ হল:

ক. পাক্সিনিয়া গ্র্যামিনিস ট্রাইটিসি (Puccinia graminis tritici) - গমের কালো রাস্ট (Black rust of wheat)।

খ. পাক্সিনিয়া গ্লুামারাম অথবা পি. স্ট্রাইফর্মিস (Puccinia glumarum or P. striiformis) - গমের হলুদ রাস্ট (Yellow rust of wheat)।

গ. পি. রেকন্ডিতা (Puccinia recondita) - গমের বাদামী রাস্ট (Brown rust of wheat)।

পাক্সিনিয়া একটি হেটেরোইশিয়াস (heteroecious) বাধ্যতামূলক পরজীবী। এর জীবনচক্র দুটি ভিন্ন পোষকের উপর সম্পন্ন হয় -

  • প্রাথমিক পোষক (Primary host) - গম (Wheat)

  • দ্বিতীয় বা বিকল্প পোষক (Secondary or alternate host) - বারবেরি (Barberry)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন