সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক

>> সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক ও নতুন উদ্ভিদ গঠন :-


সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক প্রক্রিয়া উন্নতমানের হয়। সপুষ্পক গুপ্তবীজী উদ্ভিদের নিষেক পদ্ধতির বিভিন্ন ধাপগুলি নীচে বিশদে বর্ণনা করা হল।

(1) পরাগরেণু সৃষ্টি:-
                                   ফুলের পুংকেশরের পরাগধানীর মধ্যে অবস্থিত পরাগরেণু মাতৃকোন ডিপ্লয়েড (2n) প্রকৃতির হয়। এই পরাগরেণু মাতৃকোশের মিয়োসিস বিভাজনের ফলে অসংখ্য পরাগরেণু উৎপন্ন হয়, যেগুলি হ্যাময়েড (n) প্রকৃতির হয়ে থাকে।

(2) ডিম্বাণু বা স্ত্রীগ্যামেট সৃষ্টি :- 
                                                        উদ্ভিদের ফুলের ডিম্বাশয়ের মধ্যে এক বা একাধিক ডিম্বক বর্তমান। এই ডিম্বকের ভ্রূণস্থলীর মধ্যে পরিস্ফুটনের মাধ্যমে স্ত্রীগ্যামেট উৎপন্ন হয়। প্রাথমিক অবস্থায় ভ্রূণস্থলীর মধ্যে একটি হ্যাপ্লয়েড (n) নিউক্লিয়াস অবস্থান করে। এই নিউক্লিয়াসটি মাইটোসিস কোশ বিভাজনের দ্বারা বারবার বিভাজিত হয় এবং ৪টি হ্যাপ্লয়েড (n) নিউক্লিয়াস গঠন করে। এদের মধ্যে ওটি নিউক্লিয়াস ভ্রূণস্থলীর এক মেরুতে একত্রে অবস্থান করে। এদের প্রতিপাদ কোশ (antipodal cells) বলে। অপর 3টি নিউক্লিয়াস ভ্রূণস্থলীর বিপরীত মেরুতে আসে। এদের মধ্যে দুটি নিউক্লিয়াস সহকারী কোশ (synergids) রূপে এবং একটি নিউক্লিয়াস ডিম্বাণু (egg) বা স্ত্রীগ্যামেট রূপে অবস্থান করে। অবশিষ্ট যে 2টি নিউক্লিয়াস থাকে, তারা পরস্পর মিলিত হয়ে একটি নির্ণীত নিউক্লিয়াস (definitive nucleus, 2n) গঠন করে, যা ভ্রূণস্থলীর কেন্দ্রে অবস্থান করে। 

(3) পরাগযোগ :- 
                             এই পর্যায়ে স্বপরাগযোগ বা বাহক দ্বারা ইতর পরাগযোগের মাধ্যমে পুংকেশরের পরাগধানী থেকে পরাগরেণু, গর্ভকেশরের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হয়। পরাগরেণু ফুলের গর্ভমুণ্ডে আবদ্ধ হওয়ার পর তা থেকে একটি পরাগনালী সৃষ্টি হয়। এই পরাগনালীর মাধ্যমে পরাগরেণু ডিম্বাশয়ে প্রবেশ করে।

(4) ডিম্বকের ভিতর পরাগনালীর প্রবেশ :
            (i) পরাগযোগের পর গর্ভমুণ্ড থেকে নিঃসৃত রস শোষণ করে পরাগরেণু স্ফীত হয়। এর ফলে রেণু-অন্তস্ত্বকটি রেণুরন্ধ্রের মাধ্যমে নির্গত হয়ে পরাগনালিকা গঠন করে। এই নালিকার অগ্রভাগে একটি নালিকা নিউক্লিয়াস ও পুংগ্যামেট থাকে। 
           (ii)  দুটি পুংগ্যামেট ও নালিকা নিউক্লিয়াসসহ পরাগনালিকাটি দীর্ঘ হতে থাকে এবং গর্ভমুণ্ড ও গর্ভদণ্ডের কলা ভেদ করে গর্ভাশয়ের কাছে পৌঁছোয়। 
           (iii) গর্ভাশয়ের কাছে পৌঁছোনোর পরে পরাগনালিকাটি ডিম্বাশয় মধ্যস্থ ডিম্বকের দিকে অগ্রসর হয়। অবশেষে এটি ডিম্বকরন্ধ্র (micropyle) বা ডিম্বকমূলের (chalaza) মাধ্যমে অথবা ডিম্বকত্বক ভেদ করে ডিম্বকে প্রবেশ করে। ডিম্বকের ভিতর পরাগনালীর প্রবেশের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল। 
পোরোগ্যামি (Porogamy): ডিম্বকরষ্ট্রের মধ্যে দিয়ে পরাগনালী ডিম্বকে প্রবেশ করলে, তাকে পোরোগ্যামি বলে। যেমন—লিলি(Lilium candidum)। 
 চ্যালাজোগ্যামি (Chalazogamy) : চ্যালাজা বা ডিম্বকমূলের মধ্যে দিয়ে পরাগনালী ডিম্বকে প্রবেশ করলে, তাকে চ্যালাজোগ্যামি বলে। যেমন — Casuarina sp. 
মেসোগ্যামি (Mesogamy) : পরাগনালী ডিম্বকত্বক ভেদ করে ডিম্বকে প্রবেশ করলে, তাকে মেসোগ্যামি বলে। যেমন— কুমড়ো (Cucurbita maxima)



চিত্র 1>> (ক) পোরোগ্যামি, (খ) চ্যালাজোগ্যামি, (গ) মেসোগ্যামি

(5) ভূণস্থলির ভিতর পরাগনালীর প্রবেশ : 
                                    (১) ডিম্বকের ভ্রূণপোষক কলা (nucellus) এবং ভ্রূণস্থলীর প্রাচীর ভেদ করে পরাগনালী ভ্রূণস্থলীতে প্রবেশ করে। 
                                    (২) ভ্রূণস্থলীর ভিতর পরাগনালীর প্রবেশের ক্ষেত্রে সহকারী কোশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। 
                                    (৩) পরাগনালী বিভিন্ন পথে ভ্রূণস্থলীর ভিতর প্রবেশ করতে পারে। যেমন— [i] ভ্রূণস্থলীর প্রাচীর ও সহকারী কোশ দুটির মধ্যে দিয়ে, [ii] দুটি সহকারী কোশের মধ্যে দিয়ে, [iii] ডিম্বাণু ও কোনো একটি সহকারী কোশের মধ্যে দিয়ে অথবা [iv] যে-কোনো একটি সহকারী কোশকে সরাসরি বিদীর্ণ করে।


(6) ভ্রূণস্থলীর ভিতর পুংগ্যামেটের নিক্ষেপ:    
                   (i)  ভ্রূণস্থলীতে প্রবেশ করার পর পরাগনালীর অগ্রভাগের প্রাচীর বিদীর্ণ হয়। 
                      (ii) এইসময় পরাগনালীর সামনে উপস্থিত নালিকা নিউক্লিয়াসটি (tube nucleus) বিনষ্ট হয় এবং দুটি পুংগ্যামেট (male gamete) ভ্রূণস্থলীতে মুক্ত হয়। 
                       (iii) এই সময় ভ্ৰূণস্থলীতে উপস্থিত সহকারী কোশ দুটিও বিনষ্ট হয়। 

(7) ভ্রুণ ও সস্য গঠন : 
                       গুপ্তবীজী উদ্ভিদের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এই দ্বিনিষেক পদ্ধতি। এই পদ্ধতির বিভিন্ন পর্যায়গুলি সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হল—
                                              (i) ভূণস্থলীতে নিক্ষিপ্ত দুটি পুংগ্যামেটের একটি ডিম্বাণুর দিকে ও অন্যটি নির্ণীত নিউক্লিয়াসের দিকে অ্যামিবয়েড চলনের মাধ্যমে গমন করে। 

                                                (ii) ভ্রূণস্থলীতে নিক্ষিপ্ত, এই দুটি পুংগ্যামেটের মধ্যে একটি পুংগ্যামেট ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়ে নিষেক প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে। এটিই হল প্রকৃত নিষেক (true fertilization) পদ্ধতি। 
                                                (iii) পুংগ্যামেট ও ডিম্বাণুর নিষেক পদ্ধতিটিকে সিনগ্যামি (syngamy) বলে। এর ফলে ডিপ্লয়েড জাইগোট বা ভ্রূণাণু (oospore) গঠিত হয়। 
                                              (iv) ভ্রূণস্থলীতে উপস্থিত অপর পুংগ্যামেটটি নির্ণীত নিউক্লিয়াসের সাথে নিষেকের মাধ্যমে ট্রিপ্লয়েড সস্য ( endosperm) উৎপন্ন করে। 
                                             (v) এই পদ্ধতিতে তিনটি নিউক্লিয়াসের মিলন ঘটে বলে এটিকে ত্রৈধ মিলন বা ট্রিপল ফিউশন বলে। এখানে দুটি নিষেক ক্রিয়া সম্পন্ন হয় বলে এই পদ্ধতিটিকে দ্বিনিষেক বলে।



চিত্র 2>> সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক পদ্ধতি 

দ্বিনিষেক (Double fertilisation) :-

সংজ্ঞা : ডিম্বকে উপস্থিত ডিম্বাণু ও নির্ণীত নিউক্লিয়াসের সঙ্গে দুটি পুংগ্যামেটের মিলন অর্থাৎ নিষেককে দ্বিনিষেক বলে।

স্থান : গুপ্তবীজী সস্যল উদ্ভিদদেহে দ্বিনিষেক সম্পন্ন হয়। যেমন – ধান, ভুট্টা প্রভৃতি।

→ পদ্ধতি : (i) পরাগযোগের পর অঙ্কুরিত পরাগরেণু থেকে দুটি পুংগ্যামেট ভ্ৰূণস্থলীতে পৌঁছোয়। 
                 (ii) পরাগনালী থেকে দুটি পুংগ্যামেট (n) ভ্রূণস্থলীতে মুক্ত হলে, এদের মধ্যে একটি ডিম্বাণুকে (n) ও অন্যটি নির্ণীত নিউক্লিয়াসকে (2n) নিষিক্ত করে। 
                 (iii) দুটি নিষেক প্রক্রিয়া একসাথে সম্পন্ন হয় বলে এই প্রক্রিয়াকে দ্বিনিষেক বলে।
                 (iv) এই নিষেক দুটির ফলে ডিম্বাণু থেকে জাইগোট (2n) ও নির্ণীত নিউক্লিয়াস থেকে সস্য নিউক্লিয়াস (3n) গঠিত হয় ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

About the Author

Santigopal Das is the creator of BIOSGD, a blog dedicated to exploring the fascinating world of biology in both English and Bengali. From cell structures to viral mechanisms, BIOSGD breaks down complex science into simple concepts.