বাহ্যিক গঠন :-
• হৃদপিণ্ড বক্ষ গহ্বরের (thoracic cavity) mediastinal অংশে দুটি ফুসফুসের মাঝে অবস্থিত।
• বাম ফুসফুসে কার্ডিয়াক নচ (cardiac notch) থাকে, যেখানে হৃদপিণ্ড অবস্থিত। হৃদপিণ্ডের আকার প্রায় ৫ x ৩.৫ ইঞ্চি এবং ওজন ৩০০ গ্রাম।
• এর ত্রিভুজাকৃতির উপরের চওড়া অংশটি সামান্য ডান দিকে ঝুঁকে থাকে।
• এর নিচের সরু অংশটি বাম দিকে ঝুঁকে থাকে।
• হৃদপিণ্ড দুটি পর্দা (membrane) দ্বারা আবৃত থাকে - বাইরেরটি প্যারাইটাল পেরিকার্ডিয়াম (parietal pericardium), যা সাদা তন্তুযুক্ত সংযোজক টিস্যু (fibrous connective tissue) দিয়ে গঠিত, এবং ভেতরেরটি ভিসেরাল পেরিকার্ডিয়াম (visceral pericardium), যা সেরাস স্তর (serous layer) দিয়ে গঠিত। এই দুটি পর্দা একত্রে পেরিকার্ডিয়াল মেমব্রেন (pericardial membrane) নামে পরিচিত।
• এই দুটি ঝিল্লির মধ্যবর্তী সরু স্থানটিকে পেরিকার্ডিয়াল ক্যাভিটি (pericardial cavity) বলা হয়।
• এই ক্যাভিটিতে এক প্রকার তরল পদার্থ থাকে, যাকে পেরিকার্ডিয়াল ফ্লুইড (pericardial fluid) বলে।
∆ পেরিকার্ডিয়াল ফ্লুইডের কাজ :-
1. এটি হৃদপিণ্ডকে বাইরের আঘাত (jerks) থেকে রক্ষা করে।
2. এটি হৃদপিণ্ডকে আর্দ্র রাখে। এটি দুটি পর্দাকে একে অপরের সাথে লেগে যাওয়া থেকে বাঁচায়।
3. সংকোচনের সময় ঘর্ষণের (friction) ক্ষতিকর প্রভাব থেকে হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করে।
• খরগোশ বা মানুষের হৃদপিণ্ড চারটি প্রকোষ্ঠ (chamber) বিশিষ্ট - দুটি অলিন্দ (auricles) এবং দুটি নিলয় (ventricles)।
• এটি গোলাপী রঙের এবং শঙ্কু আকৃতির (conical) হয়।
• হৃদপিণ্ডের চওড়া উপরের অংশটিকে অলিন্দ অংশ বা ভিত্তি (base) এবং নিচের শঙ্কু আকৃতির অংশটিকে নিলয় অংশ (ventricular part) বলা হয় (এর অগ্রভাগকে apex বলা হয়)।
ক. অলিন্দ (Auricles):
• হৃদপিণ্ডের অলিন্দ অংশটি ছোট এবং গাঢ় রঙের হয়।
• এর প্রাচীর (walls) পাতলা হয়।
• দুটি অলিন্দের মধ্যে, ডান অলিন্দটি বাম অলিন্দ থেকে বড়।
খ. নিলয় (Ventricles):
• নিলয় অংশটি চওড়া, পেশীবহুল (muscular) এবং হালকা রঙের হয়।
• অলিন্দের তুলনায় নিলয়ের প্রাচীর অনেক পুরু হয়।
• এটি ডান দিকে তির্যক বা বাঁকানো থাকে।
• এটি হৃদপিণ্ডের একেবারে শেষ প্রান্ত বা এপেক্স (apex) পর্যন্ত পৌঁছায় না, তাই ডান নিলয় বাম নিলয়ের চেয়ে ছোট হয়।
হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ গঠন :-
হৃদপিণ্ডের প্রস্থচ্ছেদ (Cut section):
হৃদপিণ্ডের প্রাচীর তিনটি স্তর (layer) দিয়ে গঠিত, বাইরে থেকে ভেতরের দিকে -
১. এপিকার্ডিয়াম (Epicardium) :
• এটি হৃদপিণ্ডের সবচেয়ে বাইরের স্তর।
• ভ্রূণীয় বিকাশের সময় এটি মেসোডার্ম (mesoderm) নামক স্তর থেকে উৎপন্ন হয়।
• এটি মূলত এক স্তর বিশিষ্ট চ্যাপ্টা কোষ (simple squamous epithelium) দিয়ে গঠিত। এর উপরে একটি পাতলা সংযোজক টিস্যুর (connective tissue) স্তর থাকে।
• এপিকার্ডিয়াম ভিসেরাল পেরিকার্ডিয়ামের (visceral pericardium) সমতুল্য, যা পেরিকার্ডিয়াল থলির (pericardial sac) অংশ।
২. মায়োকার্ডিয়াম (Myocardium) :
• এটি হৃদপিণ্ডের মধ্যবর্তী এবং সবচেয়ে পুরু স্তর।
• এটিও মেসোডার্ম থেকে উৎপন্ন হয়।
• এটি কার্ডিয়াক পেশী (cardiac muscle) নামক বিশেষ পেশী কলা দিয়ে গঠিত। এই পেশী কলা সরেখ (striated) হলেও অনৈচ্ছিক (involuntary), অর্থাৎ এটি আমাদের ইচ্ছার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র (autonomic nervous system) এর কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
• মায়োকার্ডিয়াম হৃদপিণ্ডের সংকোচনের জন্য দায়ী, যা সারা শরীরে রক্ত পাম্প করতে সাহায্য করে।
৩. এন্ডোকার্ডিয়াম (Endocardium):
• এটি হৃদপিণ্ডের সবচেয়ে ভেতরের স্তর।
• ভ্রূণীয় বিকাশের সময় এটি এন্ডোডার্ম (endoderm) নামক স্তর থেকে উৎপন্ন হয়।
• এটিও সরল স্কোয়ামাস এপিথেলিয়াম দিয়ে গঠিত এবং এর নিচে একটি পাতলা সংযোজক টিস্যুর স্তর থাকে।
• এন্ডোকার্ডিয়াম হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠ (chamber) এবং কপাটিকাগুলোকে (valves) আবৃত করে রাখে। এটি রক্তের সংস্পর্শে থাকে এবং রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
সেপ্টাম (Septum) :
হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রকোষ্ঠকে পৃথক করার জন্য যে প্রাচীর থাকে, তাকে সেপ্টাম বলে। প্রধানত তিনটি সেপ্টাম দেখা যায়:
ক. আন্তঃ-অলিন্দ সেপ্টাম (Inter-auricular septum):
• এটি বাম এবং ডান অলিন্দের মধ্যে বিভাজনকারী প্রাচীর।
• এটি সামান্য বাম দিকে সরে থাকে, যার কারণে ডান অলিন্দ বাম অলিন্দের তুলনায় সামান্য বড় হয়।
• ভ্রূণাবস্থায় এই সেপ্টামে একটি ছিদ্র থাকে, যাকে ফোরামেন ওভাল (Foramen ovale) বলে। জন্মের পর এটি বন্ধ হয়ে যায় এবং ফোসা ওভালিস (Fossa ovalis) নামক একটি দাগে পরিণত হয়।
খ. আন্তঃ-নিলয় সেপ্টাম (Inter-ventricular septum):
• এটি ডান এবং বাম নিলয়ের মধ্যে বিভাজনকারী প্রাচীর।
• এটি ডান দিকে সরে থাকে।
• এই কারণে বাম নিলয় ডান নিলয়ের তুলনায় বড় হয়। বাম নিলয়কে সারা শরীরে রক্ত পাম্প করতে হয়, তাই এর আকার বড় এবং প্রাচীরও পুরু হয়।
গ. অলিন্দ-নিলয় সেপ্টাম (Auriculo-Ventricular septum):
• এটি দুটি অলিন্দকে দুটি নিলয় থেকে পৃথক করে।
• এটি অলিন্দের দিকে উপরের দিকে সরে থাকে। এই কারণে অলিন্দগুলি নিলয়ের তুলনায় ছোট হয়।
• এই সেপ্টামে অলিন্দ এবং নিলয়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য কপাটিকা (valves) থাকে। ডান অলিন্দ এবং ডান নিলয়ের মধ্যে ত্রিপত্রী কপাটিকা (tricuspid valve) এবং বাম অলিন্দ এবং বাম নিলয়ের মধ্যে দ্বিপত্রী কপাটিকা (bicuspid valve/mitral valve) অবস্থিত।
Fossa Ovalis : ভ্রূণ সংবহনতন্ত্রে (foetal circulation) ফুসফুস অকার্যকর থাকে এবং তাই রক্তকে ফুসফুসে পাঠানোর প্রয়োজন নেই। এইজন্য, ফোরামেন ওভাল (Foramen ovale) একটি বাইপাস তৈরি করে। ডান অলিন্দে আসা বেশিরভাগ রক্ত এই ছিদ্রের মাধ্যমে সরাসরি বাম অলিন্দে চলে যায়। এর ফলে রক্ত ফুসফুসে না গিয়ে সরাসরি শরীরের অন্যান্য অংশে প্রবাহিত হতে পারে। জন্মের পর, যখন শিশু প্রথম শ্বাস নেয়, তখন ফুসফুস কাজ করতে শুরু করে এবং ফুসফুসের মাধ্যমে রক্ত চলাচল শুরু হয়। এর ফলে, ফোরামেন ওভালের আর প্রয়োজন থাকে না এবং এটি বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হওয়ার পর, এটি ফোসা ওভালিস (fossa ovalis) নামক একটি দাগে পরিণত হয়।