BIOSGD Time Display
BIOSGD
Santigopal Das
00:26:56
Current Time
April 29, 2025
Today's Date
Tuesday
Day of Week

হৃৎ চক্র/ cardiac cycle

 



কার্ডিয়াক চক্র (Cardiac cycle) হলো হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলির পর্যায়ক্রমিক শিথিলকরণ (relaxation) এবং সংকোচন (contraction) এর ছন্দময় প্রক্রিয়া, যা সারা শরীরে রক্ত পাম্প করে।



১. অলিন্দ সিস্টোল (Atrial Systole) :-

অলিন্দ সিস্টোল হলো অলিন্দের সংকোচন পর্যায়। এটিকে দুটি উপ-পর্যায়ে ভাগ করা যায়:

    • ডায়নামিক ফেজ (সংকোচন) (Dynamic phase/contraction) : এই পর্যায়ে অলিন্দ দুটি (ডান এবং বাম) সংকুচিত হয়। সংকোচনের ফলে অলিন্দে থাকা অতিরিক্ত রক্ত নিলয়ে প্রবেশ করে। এই সংকোচনের মাধ্যমে নিলয়ের মোট পূরণের প্রায় ২০% সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ, নিলয়ের ৮০% পূরণ অলিন্দের নিষ্ক্রিয়ভাবে রক্ত গ্রহণের মাধ্যমে হয়, আর ২০% অলিন্দের সংকোচনের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে হয়।

   • অ্যাডায়নামিক ফেজ (শিথিলকরণ) (Adynamic phase/relaxation) : সংকোচনের পর অলিন্দ দুটি অল্প সময়ের জন্য শিথিল হয়। এই শিথিলকরণের ফলে শিরা (veins) থেকে আরও বেশি রক্ত অলিন্দে প্রবেশ করতে পারে।

২. অলিন্দ ডায়াস্টোল (Atrial Diastole):

  • এই পর্যায়ে অলিন্দ দুটি সম্পূর্ণভাবে শিথিল অবস্থায় থাকে। শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে শিরা পথে যে রক্ত আসে, তা এই সময়ে অলিন্দে প্রবেশ করে এবং অলিন্দ সর্বাধিক পরিমাণে রক্ত দ্বারা পূর্ণ হয়। কার্ডিয়াক চক্রের মধ্যে এটি সবচেয়ে দীর্ঘ পর্যায়।

৩. নিলয় সিস্টোল (Ventricular Systole) :-
নিলয় সিস্টোল হলো নিলয়ের সংকোচন পর্যায়। এই পর্যায়ে নিলয় সংকুচিত হয়ে রক্ত ধমনীতে পাম্প করে। ---
    • প্রথম হৃদস্পন্দন (First heart sound/S1) : যখন নিলয় সংকুচিত হতে শুরু করে, তখন অলিন্দ-নিলয় কপাটিকা (atrioventricular valves), অর্থাৎ ত্রিপত্রী কপাটিকা (tricuspid valve) এবং দ্বিপত্রী কপাটিকা (mitral valve) বন্ধ হয়ে যায়। এই কপাটিকাগুলির বন্ধ হওয়ার শব্দই হলো প্রথম হৃদস্পন্দন (S1), যা সাধারণত "লাভ" (lub) শব্দ হিসেবে শোনা যায়।
    • আইসোমেট্রিক সংকোচন (Isometric contraction) : নিলয় সংকোচন শুরু হওয়ার পর অলিন্দ-নিলয় কপাটিকা(ত্রিপত্রী ও দ্বিপত্রী), পালমোনারি কপাটিকা এবং এওর্টিক কপাটিকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিলয়ের ভেতরে চাপ বাড়তে থাকে, কিন্তু রক্তের পরিমাণে কোনো পরিবর্তন হয় না। কারণ রক্ত তখনো ধমনীতে প্রবেশ করতে পারে না। এই অবস্থাকে আইসোমেট্রিক সংকোচন বলা হয়। এখানে "আইসোমেট্রিক" মানে "সমান দৈর্ঘ্য", অর্থাৎ পেশী সংকুচিত হলেও তার দৈর্ঘ্য পরিবর্তিত হয় না।

 নিলয় সিস্টোলের পর্যায় (Period of ventricular systole): নিলয় সিস্টোলকে দুটি উপ-পর্যায়ে ভাগ করা যায় --

(ক) সর্বোচ্চ নির্গমন কাল (Maximum ejection period): এই পর্যায়ে নিলয় প্রবলভাবে সংকুচিত হয় এবং প্রচুর পরিমাণে রক্ত মহাধমনীতে (বাম নিলয় থেকে) এবং পালমোনারি ধমনীতে (ডান নিলয় থেকে) পাম্প করে।

(খ) মন্দীভূত নির্গমন কাল (Reduced ejection period): এই পর্যায়ে নিলয়ের সংকোচন কিছুটা কমে আসে এবং রক্ত নির্গমনের হারও ধীর হয়ে যায়, কারণ নিলয় শিথিল হতে শুরু করে।

 ৪. নিলয় ডায়াস্টোল (Ventricular Diastole):

নিলয় ডায়াস্টোল হলো নিলয়ের শিথিলকরণ পর্যায়। এই সময়ে নিলয় রক্ত গ্রহণ করে। এই পর্যায়টির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো:

  • দ্বিতীয় হৃদস্পন্দন (Second heart sound/S2): নিলয় থেকে রক্ত নির্গমনের শেষে, যখন মহাধমনীর কপাটিকা (aortic valve) এবং পালমোনারি কপাটিকা (pulmonary valve) বন্ধ হয়ে যায়, তখন দ্বিতীয় হৃদস্পন্দন (S2) সৃষ্টি হয়। এই কপাটিকাগুলির বন্ধ হওয়ার শব্দ "ডুপ" (dupp) হিসেবে শোনা যায়।

  • নিলয় ডায়াস্টোলের পর্যায় (Phase of ventricular diastole) : নিলয় ডায়াস্টোলকে কয়েকটি উপ-পর্যায়ে ভাগ করা যায়:

    • (ক) প্রোটো-ডায়াস্টোলিক ফেজ (দ্রুত শিথিলকরণ) (Prot-odiastolic phase/rapid relaxation) : এই পর্যায়ে নিলয় খুব দ্রুত শিথিল হয়, যার ফলে একটি সামান্য চোষণ প্রভাব (suction effect) সৃষ্টি হয় যা রক্তকে নিলয়ের দিকে টানে।

    • (খ) আইসোমেট্রিক শিথিলকরণ ফেজ (Isometric relaxation phase) : নিলয়ের চাপ দ্রুত কমে যায়, কিন্তু প্রকোষ্ঠের আয়তনে তখনও কোনো পরিবর্তন হয় না, কারণ কপাটিকাগুলি বন্ধ থাকে।

    • (গ) প্রথম দ্রুত পূরণ ফেজ (তৃতীয় হৃদস্পন্দন - সবসময় শোনা যায় না) (First rapid filling phase/third heart sound) : অলিন্দ এবং নিলয়ের চাপের পার্থক্যের কারণে দ্রুত গতিতে রক্ত নিলয়ে প্রবেশ করে। এই সময়ে তৃতীয় হৃদস্পন্দন (S3) সৃষ্টি হতে পারে, যা সাধারণত স্বাস্থ্যবান অল্পবয়স্কদের ক্ষেত্রে শোনা যায়, তবে সবসময় শোনা যায় না।

    • (ঘ) ধীর অন্তঃপ্রবাহ ফেজ (ডায়াস্ট্যাসিস) (Slow inflow phase/diastasis) : এই পর্যায়ে অলিন্দ থেকে ধীরে ধীরে এবং স্থিতিশীলভাবে রক্ত নিলয়ে প্রবেশ করতে থাকে।

    • (ঙ) শেষ দ্রুত পূরণ ফেজ (চতুর্থ হৃদস্পন্দন - খুবই ক্ষীণ) (Last rapid filling phase/fourth heart sound) : অলিন্দ সিস্টোলের ঠিক আগে, অল্প পরিমাণে রক্ত শেষবারের মতো দ্রুত নিলয়ে প্রবেশ করে। এই সময়ে চতুর্থ হৃদস্পন্দন (S4) সৃষ্টি হতে পারে, যা খুবই ক্ষীণ এবং কদাচিৎ শোনা যায়। 



কার্ডিয়াক চক্রের সময়কাল এবং নিলয় পূরণের প্রক্রিয়াটি হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা বোঝার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কার্ডিয়াক চক্রের সময়কাল : ০.৮ সেকেন্ডের একটি কার্ডিয়াক চক্রে, সিস্টোল (সংকোচন) প্রায় ০.৩ সেকেন্ড এবং ডায়াস্টোল (শিথিলকরণ) প্রায় ০.৫ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। হৃদস্পন্দন বাড়লে এই সময়কালগুলি পরিবর্তিত হতে পারে।


নিলয় পূরণ : নিলয় পূরণের প্রক্রিয়াটি দুটি প্রধান পর্যায়ে বিভক্ত:

• প্যাসিভ ফিলিং (Passive filling): অলিন্দ যখন ডায়াস্টোল অবস্থায় থাকে, তখন মহাশিরা থেকে আসা রক্ত সরাসরি অলিন্দ থেকে নিলয়ে প্রবেশ করে। এই প্রক্রিয়াটি কোনো সক্রিয় সংকোচনের উপর নির্ভর করে না, বরং চাপের পার্থক্যের কারণে ঘটে। অলিন্দ এবং নিলয়ের মধ্যে চাপের পার্থক্য থাকার কারণে প্রায় ৭৫% রক্ত এই পদ্ধতিতে নিলয়ে প্রবেশ করে।
• অ্যাক্টিভ ফিলিং (Active filling): অলিন্দ যখন সিস্টোল অবস্থায় আসে, তখন অলিন্দের সংকোচন ঘটে এবং অবশিষ্ট ২৫% রক্ত নিলয়ে প্রবেশ করে। এই প্রক্রিয়াটি অলিন্দের সক্রিয় সংকোচনের মাধ্যমে ঘটে।


হৃৎ-চক্রের সাথে সম্পর্কিত রক্তের পরিমাণ :

হৃৎ-চক্রের সময় রক্তের পরিমাণের পরিবর্তন হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিচে বিভিন্ন পরিমাণের সংজ্ঞা এবং স্বাভাবিক মান উল্লেখ করা হলো:

ডায়াস্টোলিক ভলিউম (Diastolic volume) : ডায়াস্টোলের সময়, নিলয়গুলির পূরণের ফলে প্রতিটি নিলয়ের আয়তন প্রায় ১২০ মিলিলিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। একে এন্ড-ডায়াস্টোলিক ভলিউম (end-diastolic volume/EDV) বলা হয়। EDV=120ml 

স্ট্রোক ভলিউম (Stroke volume/SV) : নিলয় সংকোচনের সময় (সিস্টোল) নিলয় থেকে প্রায় ৭০ মিলিলিটার রক্ত পাম্প হয়। এই পাম্প হওয়া রক্তের পরিমাণকে স্ট্রোক ভলিউম বলা হয়। অর্থাৎ, এক সংকোচনে বাম নিলয় মহাধমনীতে যে পরিমাণ রক্ত পাম্প করে, তাই স্ট্রোক ভলিউম। SV= 70ml

ইজেকশন ফ্র্যাকশন (Ejection fraction/EF) : এন্ড-ডায়াস্টোলিক ভলিউমের যে অংশ পাম্প করে বের করে দেওয়া হয়, তাকে ইজেকশন ফ্র্যাকশন বলা হয়।  EF = SV/EDV =70/120 = 7/12 ( প্রায় ৬০%)

এন্ড-সিস্টোলিক ভলিউম (End-systolic volume/ESV) : সংকোচনের পর প্রতিটি নিলয়ে প্রায় ৫০ মিলিলিটার রক্ত অবশিষ্ট থাকে। এই অবশিষ্ট রক্তের পরিমাণকে এন্ড-সিস্টোলিক ভলিউম বলা হয়। 

কার্ডিয়াক আউটপুট (Cardiac output/CO) : বাম নিলয় এক মিনিটে মহাধমনীতে যে পরিমাণ রক্ত পাম্প করে, তাকে কার্ডিয়াক আউটপুট বলা হয়। একজন স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রে এর মান প্রায় ৫ লিটার/মিনিট।

CO = SV × HR

কার্ডিয়াক আউটপুট (মিলিলিটার/মিনিট) = স্ট্রোক ভলিউম (মিলিলিটার/স্পন্দন) × হৃদস্পন্দন (স্পন্দন/মিনিট)

ক. গড় হৃদস্পন্দন (Average heart rate) = ৭০ বিপিএম (স্পন্দন প্রতি মিনিট)

খ. গড় স্ট্রোক ভলিউম (Average stroke volume) = ৭০-৮০ মিলিলিটার/স্পন্দন

গ. গড় কার্ডিয়াক আউটপুট (Average cardiac output) = ৫,৫০০ মিলিলিটার/মিনিট 

রক্তচাপ (Blood Pressure) :-

  রক্তচাপ হলো ধমনীর (arteries) দেয়ালে রক্তের দ্বারা সৃষ্ট চাপ। হৃদপিণ্ডের প্রতিটি স্পন্দনের সাথে সাথে এই চাপের পরিবর্তন হয়।

সিস্টোলিক চাপ: যখন হৃদপিণ্ড সংকুচিত হয় (সিস্টোল), তখন রক্ত ধমনীতে জোরে ধাক্কা দেয়। এই সময়ে ধমনীর দেয়ালে যে সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টি হয়, তাকে সিস্টোলিক চাপ বলে। ১২০ মিমি মার্কারি একটি স্বাভাবিক সিস্টোলিক চাপ।

ডায়াস্টোলিক চাপ: যখন হৃদপিণ্ড শিথিল হয় (ডায়াস্টোল), তখন ধমনীর চাপ কমে যায়। এই সময়ে ধমনীর দেয়ালে যে সর্বনিম্ন চাপ থাকে, তাকে ডায়াস্টোলিক চাপ বলে। ৮০ মিমি মার্কারি একটি স্বাভাবিক ডায়াস্টোলিক চাপ।

রক্তচাপকে দুটি সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা হয়, যেমন ১২০/৮০। উপরের সংখ্যাটি (১২০) হলো সিস্টোলিক চাপ এবং নিচের সংখ্যাটি (৮০) হলো ডায়াস্টোলিক চাপ।

স্ফিগমোম্যানোমিটার হলো রক্তচাপ মাপার জন্য ব্যবহৃত একটি যন্ত্র। এটিতে একটি ইনফ্ল্যাটেবল কাফ (inflatable cuff), একটি ম্যানোমিটার (manometer) (চাপ মাপার যন্ত্র) এবং একটি স্টেথোস্কোপ (stethoscope) থাকে। কাফটি বাহুতে বেঁধে বায়ু দিয়ে ফুলানো হয়, যাতে ধমনীর রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ধীরে ধীরে বায়ু বের করে দেওয়া হয় এবং স্টেথোস্কোপ দিয়ে ব্র্যাকিয়াল ধমনীর শব্দ শোনা হয়। যে চাপে প্রথম শব্দ শোনা যায়, তা হলো সিস্টোলিক চাপ এবং যে চাপে শব্দ বন্ধ হয়ে যায়, তা হলো ডায়াস্টোলিক চাপ।

হেলস নামক একজন বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম ১৭৩৩ সালে ঘোড়ার রক্তচাপ মেপেছিলেন।


হৃদস্পন্দন (Heart Sounds):

  হৃদস্পন্দন হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য পরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্টেথোস্কোপ নামক যন্ত্রের মাধ্যমে বুকের উপর বিভিন্ন স্থানে শব্দ শুনে হৃদপিণ্ডের অবস্থা বোঝা যায়।

প্রথম শব্দ (S1): নিলয়ের সংকোচন শুরু হওয়ার সাথে সাথেই অলিন্দ-নিলয় কপাটিকা (mitral এবং tricuspid valve) বন্ধ হয়ে যায়। এই কপাটিকাগুলির হঠাৎ বন্ধ হওয়ার ফলে যে কম্পন সৃষ্টি হয়, তাই "লাব" শব্দ হিসেবে শোনা যায়। এটি নিলয় সিস্টোলের শুরু নির্দেশ করে।

দ্বিতীয় শব্দ (S2): নিলয় থেকে রক্ত পাম্প হওয়ার পর মহাধমনী এবং পালমোনারি ধমনীর কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়, যাতে রক্ত নিলয়ে ফিরে আসতে না পারে। এই কপাটিকাগুলির বন্ধ হওয়ার ফলে "ডুপ" শব্দ সৃষ্টি হয়। এটি নিলয় ডায়াস্টোলের শুরু নির্দেশ করে।

হার্ট মারমার: হার্ট মারমার হলো অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন যা কপাটিকার ত্রুটি বা হৃদপিণ্ডের অন্য কোনো সমস্যার কারণে হতে পারে। কপাটিকা যদি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ না হয়, তাহলে রক্তের পশ্চাৎপ্রবাহ (backflow) হয় এবং একটি ঘষা ঘষা বা শিষের মতো শব্দ শোনা যায়। এই শব্দই হলো মারমার। মারমার জন্মগত হৃদরোগ, বাতজ্বর (rheumatic fever) বা অন্যান্য হৃদরোগের কারণে হতে পারে।


NCERT







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন