Mechanism of Breathing/ শ্বাস প্রশ্বাস প্রক্রিয়া

 



শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথে জড়িত শ্বসনতন্ত্রের অংশ:

ডায়াফ্রাম (Diaphragm):

  • একটি পেশীবহুল পর্দা যা শুধুমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী (এবং কুমির) এর মধ্যে পাওয়া যায়।

  • এর স্বাভাবিক আকৃতি গম্বুজের মতো যা শরীরের গহ্বরকে দুটি অংশে বিভক্ত করে : উপরের বক্ষ গহ্বর (chest cavity) এবং নিচের পেটের গহ্বর (abdominal cavity)

  • এতে রেডিয়াল পেশী (radial muscles) থাকে। এগুলি পরিধি থেকে উৎপন্ন হয় এবং ডায়াফ্রামের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে প্রবেশ করে।

  • যখন ডায়াফ্রামের রেডিয়াল পেশীগুলি সংকুচিত হয়, তখন গম্বুজ-আকৃতির ডায়াফ্রাম নিচের দিকে নামে এবং প্রায় সমতল হয়ে যায়। তাই, বক্ষ গহ্বরের আয়তন বৃদ্ধি পায়, ফলে ডায়াফ্রাম শ্বাসগ্রহণে (ইনস্পিরেশন) সাহায্য করে।


বক্ষপিঞ্জর (Thoracic cage): 

  • ফুসফুস বক্ষ গহ্বরে (thoracic chamber) অবস্থিত যা শারীরিকভাবে একটি বায়ুরোধী গহ্বর। বক্ষ গহ্বরের আবরণ বক্ষপিঞ্জর তৈরি করে।

   উপরের দিক => ক্লাভিকল হাড় (Clavicle bones), ঘাড়

   নিচের দিক => ডায়াফ্রাম (Diaphragm)

   পৃষ্ঠীয় দিক => মেরুদণ্ড (Vertebral column) ও পাঁজর (Ribs)

   সম্মুখ দিক => স্টার্নাম (Sternum) ও পাঁজর

   পার্শ্বীয় দিক => পাঁজর


আন্তঃপঁঞ্জরাস্থ পেশী (Intercostal muscles - ICM) :

   • পাঁজরের দুটি হাড়ের মধ্যবর্তী স্থানকে আন্তঃপাঁজর স্থান (intercostal space) বলা হয় যেখানে ২ ধরনের পেশী থাকে -

      ১. বাহ্যিক আন্তঃপঁঞ্জরাস্থ পেশী (External ICM - EICM)

      ২. অভ্যন্তরীণ আন্তঃপঁঞ্জরাস্থ পেশী (Internal ICM - IICM)



   ১. বাহ্যিক আন্তঃপঁঞ্জরাস্থ পেশী (EICM) :

       • এগুলি উপরের পাঁজরের পিছনের দিক (পৃষ্ঠীয় অংশ) থেকে শুরু হয়ে নীচের পাঁজরের সামনের দিকে (সম্মুখ অংশ) পর্যন্ত বিস্তৃত।

      • এই পেশীগুলির সংকোচনের দ্বারা, পাঁজর এবং স্টার্নাম (Sternum) যথাক্রমে উপরের দিকে এবং বাইরের দিকে সরে যায়। তাই তারা শ্বাসগ্রহণে (inspiration) সাহায্য করে।

  ২. অভ্যন্তরীণ আন্তঃপাঁজর পেশী (IICM):

      • এগুলি নীচের পাঁজরের পিছনের দিক (পৃষ্ঠীয় অংশ) থেকে শুরু হয়ে উপরের পাঁজরের সামনের দিকে (সম্মুখ অংশ) পর্যন্ত বিস্তৃত।

     • এই পেশীগুলির সংকোচনের দ্বারা, পাঁজর এবং স্টার্নাম যথাক্রমে নীচের দিকে এবং ভিতরের দিকে সরে যায়।

     • তাই এটি জোরপূর্বক নিঃশ্বাস ত্যাগে (forceful expiration) সাহায্য করে যা একটি ইচ্ছা নিয়ন্ত্রিত কার্যকলাপ, তাই IICM এর সংকোচন সেরিব্রাম (cerebrum) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।



আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস দুটি প্রধান পর্যায়ে বিভক্ত : 

    প্রশ্বাস (Inspiration) এবং নিঃশ্বাস (Expiration)। 

প্রশ্বাস (Inspiration) :-

চাপের ভূমিকা (Role of Pressure) : বায়ুমণ্ডলের চাপের তুলনায় যখন ফুসফুসের ভেতরের চাপ কমে যায়, তখন বাতাস বাইরের থেকে ফুসফুসের দিকে প্রবাহিত হয়। এই চাপের পার্থক্যই প্রশ্বাস এর মূল কারণ।

ডায়াফ্রামের সংকোচন (Contraction of Diaphragm) : ডায়াফ্রাম হল একটি পেশীবহুল পর্দা যা বক্ষ গহ্বর (Thoracic cavity) এবং পেটের গহ্বর (Abdominal cavity) কে পৃথক করে। যখন ডায়াফ্রাম সংকুচিত হয়, তখন এটি নিচের দিকে নামে, ফলে বক্ষ গহ্বরের আয়তন উল্লম্বভাবে (vertically) বৃদ্ধি পায়।


বাহ্যিক ইন্টারকোস্টাল পেশীর ভূমিকা (Role of External Intercostal Muscles) : পাঁজরগুলোর মধ্যে অবস্থিত পেশীগুলিকে ইন্টারকোস্টাল পেশী বলা হয়। বাহ্যিক ইন্টারকোস্টাল পেশীগুলির সংকোচনের ফলে পাঁজরগুলি উপরের দিকে এবং বাইরের দিকে প্রসারিত হয়, যার ফলে বক্ষ গহ্বরের আয়তন অনুভূমিকভাবে (horizontally) বৃদ্ধি পায়। স্টার্নামও (Sternum) সামান্য উপরে ওঠে।


এই দুটি প্রক্রিয়ার সম্মিলিত প্রভাবে বক্ষ গহ্বরের সামগ্রিক আয়তন বৃদ্ধি পাওয়ায় ফুসফুসের আয়তনও অনুরূপভাবে বৃদ্ধি পায়।

ফুসফুসের আয়তন বৃদ্ধি পাওয়ায় ইন্ট্রাপালমোনারি চাপ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের চেয়ে কমে যায়, যা বাইরের বাতাসকে ফুসফুসের মধ্যে প্রবেশ করতে বাধ্য করে, অর্থাৎ প্রশ্বাস ঘটে।

প্রশ্বাস একটি সক্রিয় প্রক্রিয়া। সাধারণত এটি প্রায় ২ সেকেন্ড সময় নেয়।



নিঃশ্বাস (Expiration) :-

• নিঃশ্বাসের সময়, কোনো পেশীর সংকোচন (contraction) ঘটে না।

• নিঃশ্বাসের সময়, ডায়াফ্রাম এবং বাহ্যিক ইন্টারকোস্টাল পেশীগুলির শিথিলতা (relaxation) ঘটে।

• এই শিথিলতার ফলে, ডায়াফ্রাম, স্টার্নাম এবং পাঁজর তাদের আসল (স্বাভাবিক) অবস্থানে ফিরে আসে।

• যার কারণে বক্ষ গহ্বরের আয়তন হ্রাস পায় এবং ফুসফুসের উপর বক্ষপিঞ্জরের চাপ বৃদ্ধি পায়।

• এভাবে ফুসফুসের বাতাস শ্বাসনালী দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়।

• স্বাভাবিক নিঃশ্বাস একটি নিষ্ক্রিয় প্রক্রিয়া। এটি প্রায় ৩ সেকেন্ড সময় নেয়।

জোরপূর্বক নিঃশ্বাস (Forceful Expiration) : হাঁচি, কাশি, ব্যায়াম, গান গাওয়া বা যোগাভ্যাসের সময় আমাদের আরও বেশি দ্রুত এবং শক্তিশালীভাবে বাতাস বের করতে হয়। এই প্রক্রিয়াটি জোরপূর্বক নিঃশ্বাস নামে পরিচিত এবং এটি একটি সক্রিয় প্রক্রিয়া।

অভ্যন্তরীণ ইন্টারকোস্টাল পেশীগুলির সংকোচন (Contraction of Internal Intercostal Muscles) : জোরপূর্বক নিঃশ্বাসের সময় অভ্যন্তরীণ ইন্টারকোস্টাল পেশীগুলি সংকুচিত হয়। এই পেশীগুলি পাঁজরগুলিকে ভেতরের দিকে টানে, যা বক্ষ গহ্বরের আয়তন আরও দ্রুত এবং বেশি পরিমাণে কমিয়ে দেয়।

পেটের পেশীগুলির সংকোচন (Contraction of Abdominal Muscles) : পেটের পেশীগুলিও সংকুচিত হতে পারে, যা ডায়াফ্রামকে আরও উপরের দিকে ঠেলে দেয় এবং বক্ষ গহ্বরের আয়তন আরও কমিয়ে দেয়।

ফলাফল (Result) : বক্ষ গহ্বরের আয়তন দ্রুত এবং বেশি পরিমাণে কমে যাওয়ায় ফুসফুসের বাতাস দ্রুত এবং শক্তিশালীভাবে বাইরে বেরিয়ে যায়। 

স্পাইরোমিটার (Spirometer) : স্পাইরোমিটার একটি যন্ত্র যা ফুসফুসের বায়ু ধারণ ক্ষমতা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বাতাসের প্রবাহ পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়।  


শ্বাস-প্রশ্বাসের আয়তন (Respiratory Volumes):

১. টাইডাল ভলিউম (T.V.) -

এটি স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় গৃহীত বা নির্গত বাতাসের পরিমাণ। একজন মানুষের জন্য এর মান ৫০০ মিলি।

পুরো গৃহীত বাতাস ফুসফুস পর্যন্ত পৌঁছায় না।

যে অংশের বাতাস শ্বাসনালীতে থেকে যায় তাকে অ্যানাটোমিক্যাল ডেড-স্পেস (anatomical Dead-space) বলা হয়। একজন মানুষের জন্য এর মান ১৫০ মিলি।

২. রেসিডুয়াল ভলিউম (Residual Volume - RV) : সর্বোচ্চ নিঃশ্বাস ছাড়ার পরেও ফুসফুসে যে পরিমাণ বায়ু অবশিষ্ট থাকে, তাকে রেসিডুয়াল ভলিউম বলে। এই বায়ু ফুসফুসকে চুপসে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। এটি স্পাইরোমিটার দ্বারা সরাসরি মাপা যায় না। এর পরিমাণ 1200ml 

৩. ইন্সপিরেটরি রিজার্ভ ভলিউম (Inspiratory Reserve Volume - IRV): স্বাভাবিক শ্বাসের পর আরও জোরে শ্বাস নিলে যে অতিরিক্ত বায়ু ফুসফুসে প্রবেশ করানো যায়, তাকে ইন্সপিরেটরি রিজার্ভ ভলিউম বলে। এর পরিমাণ 3000ml 

৪. এক্সপিরেটরি রিজার্ভ ভলিউম (Expiratory Reserve Volume - ERV): স্বাভাবিক নিঃশ্বাসের পর আরও জোরে নিঃশ্বাস ছাড়লে যে অতিরিক্ত বায়ু ফুসফুস থেকে বের করা যায়, তাকে এক্সপিরেটরি রিজার্ভ ভলিউম বলে। এর পরিমাণ 1000ml 


ফুসফুসের ধারণক্ষমতা (Pulmonary Capacities):


ইন্সপিরেটরি ক্যাপাসিটি (I.C.) -

যখন কেউ তার ফুসফুসকে সর্বোচ্চ প্রসারণ বা বিস্তৃতি করে যে পরিমাণ বায়ু গ্রহণ করতে পারে, তাকে I.C. বলে। এতে ইন্সপিরেটরি রিজার্ভ ভলিউম এবং টাইডাল ভলিউম অন্তর্ভুক্ত।

I.C. = I.R.V. + T.V

       = ৩০০০ মিলি + ৫০০ মিলি

I.C. = ৩৫০০ মিলি

ফাংশনাল রেসিডুয়াল ক্যাপাসিটি (FRC) -

নিঃশ্বাসের পর ফুসফুসের ভিতরে স্বাভাবিকভাবে যে পরিমাণ বায়ু অবশিষ্ট থাকে, তাকে FRC বলে। এতে এক্সপিরেটরি রিজার্ভ ভলিউম এবং রেসিডুয়াল ভলিউম অন্তর্ভুক্ত।

FRC = ERV + RV

       = ১০০০ মিলি + ১২০০ মিলি

FRC = (২২০০ থেকে ২৫০০ মিলি)

ভাইটাল ক্যাপাসিটি (V.C.) -

গভীরতম শ্বাস নেওয়ার পর সবচেয়ে জোরপূর্বক নিঃশ্বাসের মাধ্যমে যে পরিমাণ বায়ু বের করা যায়, তাকে V.C. বলে। এতে ইন্সপিরেটরি রিজার্ভ ভলিউম, এক্সপিরেটরি রিজার্ভ ভলিউম এবং টাইডাল ভলিউম অন্তর্ভুক্ত।

V.C. = IRV + ERV + TV

       = ৩০০০ মিলি + ১০০০ মিলি + ৫০০ মিলি

       = ৪৫০০ মিলি (৪৩০০ থেকে ৪৮০০ মিলি)

টোটাল লাং ক্যাপাসিটি (T.L.C.) -

ফুসফুস সর্বোচ্চ যে পরিমাণ বায়ু ধারণ করতে পারে, তাকে TLC বলে। এতে ইন্সপিরেটরি রিজার্ভ ভলিউম, টাইডাল ভলিউম, এক্সপিরেটরি রিজার্ভ ভলিউম এবং রেসিডুয়াল ভলিউম অন্তর্ভুক্ত।

TLC = IRV + TV + ERV + RV

       = ৩০০০ + ৫০০ + ১০০০ + ১২০০

TLC = ৬০০০ মিলি (প্রায়) (৫৭০০ থেকে ৬০০০ মিলি)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!